ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার গতি নিয়ে এগোচ্ছে। এটি আজ মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৬৫ থেকে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। আগামীকাল সকালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশা উপকূলে এটি আঘাত হানতে পারে।
এরই মধ্যে ঝড়টির প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী এলাকার নিচু এলাকা এবং চরাঞ্চলগুলোতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ টপকে ওই পানি প্রবেশ করছে। সুন্দরবনের দুবলার চরসহ জেলে পল্লিগুলোর বেশির ভাগ এলাকা এরই মধ্যে ডুবে গেছে।বিজ্ঞাপন
দেশের উপকূলীয় জেলাগুলো থেকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, খুলনার কয়রাসহ কয়েকটি উপজেলায় আগে থেকেই বেড়িবাঁধগুলো ভাঙা ছিল। সেখান দিয়ে এখন বসতি এলাকা এবং মাছের ঘেরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়ছে। ঝোড়ো হাওয়ার কারণে অনেক স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এসব এলাকার অধিবাসীরা নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো উপকূলবাসীকে নিরাপদ ও উঁচু স্থানে যাওয়ার জন্য মাইকিং করছে।
এ ব্যাপারে ঘূর্ণিঝড় বিশেষজ্ঞ ও কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে খুলনা ও সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার মানুষদের দ্রুত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া উচিত। কারণ ঘূর্ণিঝড়টি যদি কাল ভোরে আঘাত করে, তাহলে এই দুই জেলার নদীতীরবর্তী বাসিন্দাদের বাড়িঘর জোয়ারের পানিতে ডুবে যেতে পারে। অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও আছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন টাইফুন অ্যান্ড ওয়ার্নিং সেন্টারের পূর্বাভাস বলছে, ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১৯ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। এটি দ্রুত উপকূলের দিকে এগোচ্ছে এবং বাতাসের গতিবেগও বাড়ছে। এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। জোয়ারের পানি ফুলে-ফেঁপে উঠছে। আগামীকাল সকালের মধ্যে তা আরও শক্তি বাড়িয়ে মারাত্মক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। উপকূলে আঘাত করার সময় এর বাতাসের গতিবেগ কমপক্ষে ১৩০ কিলোমিটার হতে পারে। বিজ্ঞাপন
এ ব্যাপারে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই ফুট উঁচু হয়ে গেছে। তাই অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আমরা ১৪ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৬৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রেখেছি। আর উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি মেরামত শুরু করেছে।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দর এবং উপকূলীয় এলাকাকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সমুদ্রে মাছ ধরার নৌকা এবং নৌযানগুলোকে উপকূলের নিরাপদ স্থানে চলে আসতে বলা হয়েছে। সংস্থাটি মনে করছে, ঘূর্ণিঝড়টি আজ বিকেলের মধ্যে অনেক বেশি শক্তিশালী বা সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে। এতে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৬৫ থেকে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে যেতে পারে। জোয়ারের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না। এটি পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশা উপকূলেই আঘাত করবে। তবে আমাদের এখানে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গিয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে।’
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এবং স্থানীয় মেঘের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গতকাল রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সন্দ্বীপে ১৩১ মিলিমিটার। আজকেও দেশের বেশির ভাগ স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে উপকূলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।