প্রবীণ রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যমোহাম্মদ নাসিম এমপি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর ডিপ কোমায় থাকা অবস্থাতেই শনিবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তার বাবা ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ডের শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারে অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
মোহাম্মদ নাসিমের মায়ের নাম মোসাম্মৎ আমিনা খাতুন, যিনি আমেনা মনসুর হিসেবেই পরিচিত। তিনি একজন গৃহিণী ছিলেন। নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্মাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম।
১৯৯৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। পরে ওয়ান ইলেভেনের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে কারাবন্দি ও নির্যাতিত হন। এই কারা নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২০০৮ এর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তবে ২০১৪ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ওই বছরের ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজােট সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। চলতি একাদশ সংসদে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির মধ্য দিয়ে ছাত্রজীবনেই রাজনীতি শুরু মোহাম্মদ নাসিমের। পরে যুবলীগ হয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেন। দলের গত তিনটি জাতীয় সম্মেলনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়ে আমৃত্যু ওই পদে ছিলেন।
মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্বেও ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন নাসিম, ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।