আজ - শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ১১:০১

করোনাকে যশোরের গ্রামের মানুষ মনে করছে ‘সিজনাল জ্বর’

কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও যশোরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বোধগম্য কারণেই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া শহর থেকে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ।

যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের মুদি দোকানি তোফাজ্জেল হোসেন জ্বর-গলা ও মাথা ব্যথা, সর্দি-কাশি নিয়ে বাড়িতে ঘুরছেন তিন দিন। চিকিৎসকের ভাষ্য, নিশ্চিত করোনার উপসর্গ হলেও নমুনা পরীক্ষা করেননি তিনি। আর তোফাজ্জেলের বক্তব্য, এ তো ‘সিজন্যাল জ্বর’। করোনা না! করোনা তো শহরের রোগ! ও গ্রামে ঢুকবে কেন! তোফাজ্জেলের মতো একই অবস্থা সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শার কন্দপপুর গ্রামের শরিফুলের। কয়েক দিন ধরে তিনিও জ্বর ও সর্দি কাশিতে ভুগছেন। করেননি করোনা পরীক্ষা। শরিফুল বলেন, ঠান্ডা জ্বর তো প্রতি বছরই হয়। স্বাভাবিক নিয়মেই তার এই রোগ হয়েছে। তার বাড়িসহ আশপাশের প্রায় সব বাড়িতেই জ্বর, ঠান্ডা ও সর্দি-কাশিতে ভুগছেন অনেকে। তোফাজ্জেল ও শরিফুলের মতো এখন করোনা উপসর্গ নিয়ে ঘুরছেন গ্রামের অসংখ্য মানুষ।

যশোরের গ্রামের বাসিন্দারা একে ‘সিজন্যাল অসুখ’ বলেই মনে করছেন। জ্বর, সর্দি-কাশি, গা ব্যথা ও ডায়রিয়া দেখা দিলেও বেশির ভাগ লোক ডাক্তার দেখাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তবে সচেতনদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, সংক্রমণের শৃঙ্খল ভেঙে দিতে না পারায় এমন পরিস্থিতি উদ্ভব হয়েছে। সীমান্তের জেলা ও উপজেলাগুলোতে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট বাড়াতে হবে। আর স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জেলার অন্য উপজেলায় হঠাত্ বেড়ে গেছে সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। উপসর্গ থাকলেও অধিকাংশ মানুষ করোনা পরীক্ষায় তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে দিনকে দিন করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি বেড়েই চলছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, যশোর হাসপাতালে করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটে ভর্তি আছেন ৮২ জন এবং আইসোলেশন ওয়ার্ডে আছেন ৪৯ জন। এখন হাসপাতালের মেঝেতেও জায়গা নেই। শয্যা খালি না থাকায় ৩০ জনকে হাসপাতালের মেঝেতে রাখা হয়েছে। শহরের পাশাপাশি করোনায় সংক্রমণ গ্রামাঞ্চলেও বেড়ে যাওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ইতিপূর্বে গ্রামের মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার কম ছিল। কিন্তু গেল মে মাসের শেষদিক থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলা সদরের মানুষের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষই বেশি। এখন প্রতিদিন যশোর জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে তিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এসব রোগীর অর্ধেকের বেশি সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত।

আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আরিফ আহমেদ জানান, হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার গ্যাস রিফিল করে চালু করা হতে পারে। হাসপাতালে এ মুহূর্তে ৪৮ সিলিন্ডার অক্সিজেন মজুত আছে। এছাড়া হাসপাতালে তিনটি ভেন্টিলেটর চালু রয়েছে। হাসপাতালে ফিমেল পেয়িং ওয়ার্ড ও এইচডিইউ ইউনিটকে রেড জোনের আওতাভুক্ত করে ৫০টি শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, গত মাসের শেষের দিক থেকে চলতি মাস জুড়ে জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পারিবারিক-সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বেড়ে গেছে। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়েও উদাসীনতা চোখে পড়ার মতো। গ্রামগুলোর প্রতিটি বাড়িতেই জ্বর-সর্দি নিয়ে কেউ না কেউ চিকিৎসা নিচ্ছে। উপসর্গ দেখা দিলেই যে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মীরা প্রচার চালাচ্ছেন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান জানান, যশোরে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রুখতে কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। তবে এ বিধিনিষেধ মানছে না সাধারণ মানুষ। বিধিনিষেধ মানাতে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সেই সঙ্গে জনগণকেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনিl

উল্লেখ করা যেতে পারে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় যশোরে চলমান বিধিনিষেধ তৃতীয় দফায় বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

সূত্র ।। ইত্তেফাক

আরো সংবাদ