আজ - রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - দুপুর ২:২৩

কানাডায় রানি ভিক্টোরিয়া-এলিজাবেথের ভাস্কর্য ভাঙচুর

কানাডায় রানি ভিক্টোরিয়ার ও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে বিক্ষোভকারীরা। বৃহস্পতিবার দেশটির ম্যানিটোবা প্রদেশে এ ভাঙচুর চালানো হয়। সম্প্রতি কানাডায় একের পর এক আদিবাসী শিশুদের গণকবর উদ্ধারের ঘটনায় ক্ষোভের জেরে এ হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া তারা আরও ১০টি ক্যাথলিক চার্চে হামলা চালায়।

সম্প্রতি যেসব স্কুলগুলো থেকে আদিবাসী শিশুদের গণকবর উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো ১৯ ও ২০ শতকে ক্যাথলিক চার্চের অধীনে পরিচালিত হতো। সেসময় স্কুলে জোরপূর্বক রাখা হতো আদিবাসী শিশুদের। চালানো হতো মানসিক নির্যাতন। ধারণা করা হচ্ছে উদ্ধার হওয়া গণকবরগুলো এইসব শিশু শিক্ষার্থীদের।

বৃহস্পতিবার ছিল কানাডার ১৫৪তম জন্মদিন। জাতীয় এ দিবসটি উপলক্ষে দেশজুড়ে নানা আয়োজন চলছিল কানাডায়। এসময় হঠাৎ বিভিন্ন চার্চে হামলা শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। ভেঙে দেয়া হয় অনেকগুলো চার্চের জানালা ও দরজা। চার্চের জানালার গ্লাসে রক্ত লাগানো হাতের ছাপও দিয়েছেন কেউ কেউ। এক পর্যয়ে ভবনের প্রাঙ্গনে থাকা রানি ভিক্টোরিয়া ও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাস্কর্য টেনে ফেলে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এর আগেও কানাডায় বেশ কয়েকটি স্থানে চার্চে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।

আঠারো-উনিশ শতকে কানাডা সরকার ও রোমান ক্যাথলিক চার্চের যোগসাজশে আদিবাসীদের সঙ্গে করা হয়েছিল বর্বর আচরণ। আদিবাসী সন্তানদের আধুনিক সমাজে খাপ খাওয়ানোর নামে জোরপূর্বক আবাসিক স্কুলে রাখার যে উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন সরকার, তার ফলাফল ছিল ভয়াবহ। স্কুলগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যায় কয়েক হাজার শিশু। পরে স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া হলেও কৌশলে চাপা পড়ে যায় আদিবাসী শিশুমৃত্যুর বিষয়টি। সম্প্রতি ওই ধরনের বেশ কয়েকটি স্কুলে কয়েকশ কবরের সন্ধান পাওয়ার পর চলছে সমালোচনা।

সবশেষ এ তালিকায় যোগ হয়েছে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ক্র্যানব্রুক এলাকার কাছাকাছি সেন্ট ইউজেনস মিশন স্কুল। বহু বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলটির প্রাঙ্গণে ১৮২টি কবর খুঁজে পেয়েছেন অনুসন্ধানকারীরা।

লোয়ার কুটানি ব্যান্ড নামে একটি আদিবাসী সংগঠন বুধবার জানিয়েছে, তারা মাটির নিচে অনুসন্ধানযোগ্য রাডার ব্যবহার করে স্কুলটির জায়গায় সাত থেকে ১৫ বছর বয়সী শতাধিক শিশুর দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছে।

ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল হিস্ট্রি অ্যান্ড ডায়ালগ সেন্টারের তথ্যমতে, স্কুলটি ১৮৯০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। এটি ক্যাথলিক চার্চের অধীনে পরিচালিত হতো। সেখানে আদিবাসী শিশুদের রেখে আধুনিক কানাডীয় সমাজের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মতো শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছিল।

১৮ থেকে ১৯ শতকে এ ধরনের অন্তত ১৩৯টি বোর্ডিং স্কুল চালু করেছিল কানাডা সরকার। ধারণা করা হয়, ওইসব আবাসিক স্কুলে ছয় হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছিল। এর জন্য সেখানকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে দায়ী করা হয়। এছাড়া, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের কারণে অনেক শিক্ষার্থীই পালিয়ে গিয়েছিল।

পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। গত বছর এ ধরনের স্কুলগুলোতে কবর অনুসন্ধানের কাজ শুরু হয়।

গত মাসে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার কামলুপস ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে ২১৫টি কবরের সন্ধান পাওয়া যায়। গত সপ্তাহে সাসকাচেওয়ানে ম্যারিভাল স্কুলে পাওয়া যায় ৭৫১টি কবর। এগুলোর কোনোটিতেই কবরের নাম-নিশানা ছিল না, অর্থাৎ কোনো একসময় সেগুলো নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

এসব আবিষ্কারের পরিপ্রেক্ষিতে কানাডা সরকার ও ক্যাথলিক চার্চের ওপর দায় স্বীকারের জন্য চাপ বাড়ছে। আদিবাসী নেতারা পোপ ফ্র্যান্সিসকে ক্ষমা চাওয়া এবং স্কুলগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া স্কুলে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দিতে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

আরো সংবাদ