আজ - রবিবার, ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি, (বসন্তকাল), সময় - সকাল ১১:০৩

কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে হত্যাকান্ড- ৮ কিশোর গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার।।  যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে ঘটে যাওয়া অমানুষিক নির্যাতনে তিন কিশোর হত্যা ও ১৫ জনকে আহতের ঘটনায় বন্দি আট কিশোরকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোরের চাঁচড়া ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বন্দি থাকা আট কিশোরকে (গ্রেফতার) শ্যোন অ্যারেস্টের জন্য রোববার আদালতে আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। তারা হলেন, চুয়াডাঙ্গার আনিছ, গাইবান্ধার খালিদুর রহমান তুহিন, নাটোরের হুমাইদ হোসেন ও মোহাম্মদ আলী, পাবনার ইমরান হোসেন ও মনোয়ার হোসেন, রাজশাহীর পলাশ ওরফে শিমুল ওরফে পলান এবং কুড়িগ্রামের রিফাত আহমেদ। এছাড়াও এই ঘটনায় পাঁচ সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
গত ১৩ আগস্ট যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোর ‘বন্দিদের’ অমানুষিক মারপিট করা হলে তিন কিশোর নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় ১৪ আগস্ট রাতে নিহত কিশোর পারভেজ হাসান রাব্বির বাবা রোকা মিয়া যশোর কোতয়ালী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অজ্ঞাত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসামি করা হয়। পুলিশ এ মামলায় কেন্দ্রের সহকারী পরিচালকসহ পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করে। শনিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, শনিবার বিকেলে আদালত পাঁচজনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করার পরপরই তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। আজও (রোববার) তা চলমান রয়েছে।
এদিকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ওই ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর দুই সদস্যের যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, সে কমিটি ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। কমিটির প্রধান সমাজসেবা অধিদপ্তর ঢাকার পরিচালক সৈয়দ নূরুল বাসির বলেন, ইতিমধ্যেই তারা যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত কিশোরদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্তের জন্য তারা যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে যাবেন। এরপর ঢাকায় গিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের রিপোর্ট প্রদান করবেন। এ তদন্ত কমিটির অপর সদস্য হলেন সমাজসেবা অধিদপ্তর ঢাকার উপপরিচালক এমএম মাহমুদুল্লাহ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই এ কমিটি বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে। কিশোরদের নির্মমভাবে মারপিটের পরও সময় মতো যদি তাদের হাসপাতালে নেওয়া হতো, তাহলে প্রাণহানির ঘটনা নাও ঘটতে পারতো বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি। নিহত তিন কিশোরকে হাসপাতালে নেওয়া হয় মৃত অবস্থায়। আর ঘটনার প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা পর আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এদিকে একই ঘটনা তদন্তে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবুল লাইছকে প্রধান করে তিন সদস্যের যে তদন্ত কমিটি গঠন করে, সেই কমিটিও তাদের কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান।
বৃহস্পতিবার এই ঘটনার পর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং দাবি করেন, কেন্দ্রের শিশু কিশোরদের দুই গ্রুপের মারামারিতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরে আহত কিশোরদের বক্তব্য ও পুলিশের তদন্তে স্পষ্ট হতে থাকে যে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দয় মারপিটের কারণেই তিন কিশোর নিহত ও ১৫ কিশোর আহত হয়।
আটককৃতরা হলেন, যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক ও সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ও প্রবেশন অফিসার মাসুম বিল্লাহ, কারিগরি প্রশিক্ষক ওমর ফারুক, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম ও সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান। শুক্রবার দশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হেফাজতে নেওয়া হলে মামলার পর রাতে উল্লিখিত পাঁচজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
শুনানি শেষে যশোরের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহাদী হাসান কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, প্রবেশন অফিসার মাসুম বিল্লাহ, সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমানকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আর কারিগরি প্রশিক্ষক ওমর ফারুক ও ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলমকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ হয়।

আরো সংবাদ