খুলনা প্রতিনিধি: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ (খুলনা সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনে লড়বেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে থাকছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খুলনা মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। হেভিওয়েট এই দুই প্রার্থীর মধ্যে জমজমাট নির্বাচনী লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। জুয়েল দলের একক প্রার্থী হলেও মঞ্জুর সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন আরও দুইজন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ বারী। বিগত দিনে এ আসনে বিএনপিরই প্রাধান্য দেখা গেছে। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ রাজ্জাক আলী বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিজয়ী হন এ আসনটিতে। পরে তার ছেড়ে দেয়া আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আসগর লবী। তারপর নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানকে পরাজিত করেছিলেন এক হাজার ৬৭০ ভোটের ব্যবধানে। ওই নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছিলেন ৯০ হাজার ৯৫০ ভোট আর মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান পান ৮৯ হাজার ২৮০ ভোট।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করেনি। ফলে জাতীয় পার্টি-জেপির তৎকালীন নগর সভাপতি রাশিদা করিমকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান। এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি তিনি।
মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরুর আগেই গত ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা ও ব্যবসায়ী শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলকে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে খুলনা-২ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তারপর থেকেই ঘরোয়া কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়েছেন শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। গত ২৬ অক্টোবর বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে খুলনা-২ আসনে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করেন তিনি।
অন্যদিকে বিএনপির দুর্গখ্যাত এ আসনটি পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ ও স্বতঃস্ফূর্ত দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ঘরোয়া কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বেলা ১০টা পর্যন্ত এক লাখ ৮ হাজার ৯৫৬ ভোট পান নজরুল ইসলাম মঞ্জু। পরে জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। এক লাখ ৭৬ হাজার ৯০২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক। তবে এ নির্বাচনের ফলাফল বিএনপির ভোটের আসল চিত্র নয় বলে দাবি নেতাকর্মীদের।
দলমত নির্বিশেষে খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে দাবি করছেন নেতাকর্মীরা। এ কারণেই দলীয় মনোনয়নের জন্যে লবিং বা দুশ্চিন্তায় না থেকে সংসদীয় আসনে ঘরোয়া কর্মসূচিতে ফুরফুরে মেজাজে অংশ নিচ্ছেন তিনি।
তবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জু। দলীয় কার্যালয়ে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, খুলনা-২ আসনে শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল দলের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত। তিনি ব্যতীত দলের কেউ মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেননি। জুয়েল প্রার্থী হওয়ায় নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার স্বার্থে আগামী নির্বাচনে ‘নৌকা’ প্রতীকের জয় অবসম্ভাবী।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বিগত সিটি নির্বাচনে নগরবাসীর কাঙ্খিত মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। জাল ভোট, কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপার লুটপাট করেছে ক্ষমতাসীনরা। সেই লুটপাটে সহযোগিতাকারী প্রশাসন এখনো খুলনাতে বহাল তবিয়তে। তাই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। খুলনা বিএনপির শহর। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিজয় সুনিশ্চিত।
প্রসঙ্গত, খুলনা-২ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা ও দলের নগর কমিটির যুব বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিনও দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
খুলনা-২ (খুলনা সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনের ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৯৪ হাজার ৮৯ জন। এর মধ্যে সদর থানা এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ৯২টি ভোটকেন্দ্রে ৩৯৭টি বুথের আওতাধীন মোট ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৮১০ জন। আর সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার ৭টি ওয়ার্ডের ৬৫টি ভোটকেন্দ্রে ২৮৫টি বুথের আওতাধীন মোট ভোটার ১ লাখ ২৫ হাজার ২৭৯ জন