আজ - শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - সকাল ১০:১১

চিকিৎসা পেশা কিছু দুর্বৃত্তের কাছে বন্দী: হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার: চিকিৎসা পেশা কিছু দুর্বৃত্তের কাছে বন্দী হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, কতিপয় দুর্বৃত্তের কর্মকাণ্ডের কারণে চিকিৎসাসেবার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। বিপদে পড়লে মানুষ তিন জনের কাছে যায়। পুলিশ, আইনজীবী ও ডাক্তার। এই তিনটা পেশা যদি ধ্বংস হয় তাহলে মানুষে কোথায় যাবে? ডাক্তারি একটি মহান পেশা। এই পেশাটি কতিপয় দুর্বৃত্তের কাছে বন্দী।

সোমবার চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিতে আসা চোখ হারানো ২০ জনের ক্ষতিপূরণের রুল শুনানিতে ডাক্তারদের বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর পাবলিক পারসেপশন ভালো না এবং ডাক্তারদের ব্যবহারও ভালো না বলে মন্তব্য করেন আদালত।

আদালত অবমাননা সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

আদালতে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত। তার সঙ্গে ছিলেন সভাষ চন্দ্র দাস। অন্যদিকে, ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমিনুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।

আদালত বলেন, দেশে অনেক স্বনামধন্য চিকিৎসক এবং ভালো মানের চিকিৎসা সেবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কতিপয় ভুল চিকিৎসার ভয়ে রোগীরা পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাচ্ছে। এতে দেশীয় মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। তাই আদালত এ ধরনের পরিস্থিতি কমিয়ে আনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদকে নির্দেশনা দেন।

এ সময় আদালত স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ডাক্তারদের অবহেলা থাকলে তার যথাযথ শাস্তি হওয়া উচিত। কতিপয় দুর্বৃত্তের জন্য এই মহান পেশা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু দুর্বৃত্তের কাছে বন্দী হয়ে পড়েছে চিকিৎসা পেশা।’ চট্টগ্রামে ধর্মঘট ডাকা প্রসঙ্গে আদালত বলেন, ‘নিজেদের ভুল ঢাকার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া আরো অন্যায়।’

আদালত বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থাকতে র‌্যাবকে কেন অভিযান চালাতে হবে। তাহলে অধিদফতরের কাজ কী বলেও প্রশ্ন রাখেন আদালত।

এর আগে গত ৩ জুলাই চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিতে এসে চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুলের জবাব না দেয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনকে ব্যাখ্যা দিতে তলব করেন হাইকোর্ট।

গত ২৯ মার্চ বিভিন্ন জাতীয়  দৈনিক  প্রকাশিত ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইজীবী অমিত দাসগুপ্ত এই রিট আবেদন করেন।

গত ৪ মার্চ থেকে চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয় দিনে ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি (ফ্যাকো) কাটা হয়। ওই অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন।

সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরদিন বাসায় ফেরার পর ওই রোগীদের চোখে সংক্রমণ দেখা দেয়। চোখে জ্বালা-পোড়া নিয়ে তারা যোগাযোগ করেন ইমপ্যাক্ট হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও পরে কয়েকজন রোগীকে স্থানীয় এক চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞ তাদের জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেন।

এদের মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইমপ্যাক্ট থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে যাওয়ায় ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়।

আরেক নারীর অপারেশন করা বাম চোখের অবস্থাও ভালো নয়। ঢাকায় দ্বিতীয় দফায় অপারেশন করলেও দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসেনি তার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ২০ রোগীর সবাই দরিদ্র। কেউ স্বজনের কাছে ধারদেনা করে, কেউ বাড়ির ছাগল-মুরগি বিক্রি করে, কেউ এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ইমপ্যাক্ট হাসপাতালে গিয়েছিলেন চোখ সারাতে।

আরো সংবাদ