অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি; দশ লাখ টাকা দাবিতে জিম্মি করে আটদিন আটকে রেখে নির্যাতনের পর র্যাব অভিযান চালিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার ও জিম্মিকারীকে আটক করে। এ ঘটনায় জমিন অযোগ্য একাধিক ধারায় মামলাও হয়। কিন্তু ঘটনার মাত্র চারদিনের মাথায় আসামি জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ‘সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামি জেলহাজতে আটক রাখা প্রয়োজন’ উল্লেখ করলেও রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আসামি জামিনের বিরোধিতা করেননি। এমনকি দু’পক্ষের আইনজীবীই পিপি’র চেম্বারে বসে ভার্চুয়াল শুনাতিতে যুক্ত হয়েছিলেন, এমন অভিযোগও রয়েছে।
গত ১ আগস্ট যশোর জেলার শার্শা থানাধীন কুচামোড়া এলাকার মেসার্স খালিদ বেভারেজ প্রা. লি. ফ্যাক্টরিতে র্যাব অভিযান চালায়।
অভিযানে জিম্মি করে রাখ গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার পালপানি মন্ডলপাড়া এলাকার মৃত গোলাম মোস্তফা মন্ডলের ছেলে বদিউজ্জামান মন্ডলকে (৩৩) উদ্ধার ও জিম্মিকারী আসামি যশোরের শার্শা উপজেলার বড়বাড়িয়া পানবাড়ি এলাকার কোরবান আলীর ছেলে খালিদ হাসান শান্টুকে আটক করা হয়।
এ ঘটনায় পরদিন ১ আগস্ট শার্শা থানায় ধারা- ৩৪৩/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৮৪/৩৮৫/৩৮৭/৩৭৯/৫০৬/৩৪ বাংলাদেশ পেনাল কোড আইনে মামলা করেন ভিকটিম বদিউজ্জামান মন্ডলের স্ত্রী শানজিদা আক্তার বিথী।
বাদী শানজিদা আক্তার বিথী জানান, তার স্বামী বদিউজ্জামান মন্ডল মেসার্স খালিদ বেভারেজ প্রা. লি. ফ্যাক্টরিতে ম্যানেজার পদে কর্মরত। প্রতিষ্ঠানের মালিক খালিদ হাসান শান্টু গত ২৪ জুলাই থেকে তার স্বামীকে ফ্যাক্টরিতে আটকে রেখে ১০ লাখ টাকা দাবি করে নির্যাতন শুরু করে।
শার্শা থানায় ১ আগস্ট দায়েরকৃত এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন। তিনি আসামি আদালতে সোপর্দ করে উল্লেখ করেন, ‘মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামি জেলহাজতে আটক রাখা প্রয়োজন।’ ৩ আগস্ট শার্শার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামি খালিদ হাসান ওরফে শান্টু’র জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়।
একদিন পর ৪ আগস্ট আসামির আইনজীবী মোজাফফর উদ্দিন মোহন যশোর ভার্চুয়াল আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করেন। শুনানি শেষে যশোর ভার্চুয়াল আদালতের বিচারক সিনিয়র দায়রা জজ মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক আসামি খালিদ হাসান শান্টুর জামিন প্রদান করেন। জামিন আদেশে বিচারক উল্লেখ করেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর ভার্চুয়াল শুনানিকালে আসামির জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন নাই।’ অভিযোগ রয়েছে, দু’পক্ষের আইনজীবীই পিপি’র চেম্বারে বসে ভার্চুয়াল শুনাতিতে যুক্ত হয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. ইদ্রিস আলী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রের পাবলিক প্রসিকিউটর, সরকারের না। যেটি যথার্থ সেটিই বলবো। অনেক সময় আমার কথা আসামির পক্ষে যেতেও পারে। কারণ আমি রাষ্ট্রের, আমি সবার। তবে আমি যথার্থ কথা বলেছি কিনা এটাই বিবেচ্য।’
অ্যাড. ইদ্রিস আলী স্বীকার করেন এই মামলার চাঁদাবাজির ধারাটি ননবেইলএবল (অজামিনযোগ্য)। তবে তিনি দাবি করেন, ভিকটিম আসামির ফ্যাক্টরির ম্যানেজার। চাঁদাবাজির বিষয়টি আসে না। এটি বাদ দিলে অন্য ধারাগুলো জামিনযোগ্য। আদালত সবপক্ষের বক্তব্য শুনে জামিন দিয়েছেন। আর তার চেম্বারে বসে আসামি পক্ষের আইনজীবীর শুনানিতে অংশ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে আসামি পক্ষের আইনজীবী মোজাফফর উদ্দিন মোহনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ‘জামিনের ব্যাপারে আদালতে খোঁজ নেন’ বলে ফোন কেটে দেন। এরপর ফোন দিলে তিনি আর ফোন ধরেননি।
এ প্রসঙ্গে সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. রফিকুল ইসলাম পিটু বলেন,এ প্রসঙ্গে সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. রফিকুল ইসলাম পিটু বলেন, র্যাব কর্তৃক ওই আসামিকে আটক ও ভিকটিম উদ্ধারের ঘটনাটি তিনি জানেন। এই মামলার ৩০৭, ৩৮৫ ও ৩৮৭ জামিনঅযোগ্য ধারা। রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্ব হচ্ছে মামলায় বাদী ও ভিকটিমের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেয়া। এরপর আদালত বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ যদি আসামির জামিনের বিরোধিতাই না করে, তা খুবই দুঃখজনক।