আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - দুপুর ১২:৩৩

জুলেখা হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী ১৯ বছর পর গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

 

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মানিকগঞ্জের চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী জুলেখা (১৯) হত্যা মামলার দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী’কে গ্রেফতার করার জন্য ২২ জুন ২০২২ তারিখ রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন চর সৈয়দপুর এলাকায় সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী সিরাজুল (৪০)’কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

গর্ভবতী জুলেখা হত্যা মামলার বিবরণে জানা যায় যে, গত ২০০২ সালের জুলাই মাসে গ্রেফতারকৃত আসামী মানিকগঞ্জ সদর থানার বাহের চর এলাকার সিরাজুল ইসলাম এর সাথে সিংগাইর থানাধীন উত্তর জামশা গ্রামের জনৈক মোঃ আব্দুল জলিল এর মেয়ে ভিকটিম জুলেখা বেগমের পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বেশকিছু নগদ অর্থ, গহণা এবং আসবাবপত্র বরপক্ষকে প্রদান করা হয়। বিয়ের পর হতে আসামী সিরাজুল জুলেখাকে আরো যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো এবং জুলেখাকে যৌতুক না দিতে পারলে তালাক দিবে মর্মে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতো।এর মাঝেয় জুলেখা ৮ মাসের অন্তঃসত্তা হয়ে পড়েন।

জুলেখার পরিবার থেকে সিরাজুল কাঙ্খিত পর্যাপ্ত যৌতুক না পাওয়ার ফলে স্বামী সিরাজুলের সাথে জুলেখার পারিবারিক কলহ আরো বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে সিরাজুল তার প্রতিবেশী মোশারফ নামে এক যুবকের সাথে স্ত্রী জুলেখার পরকীয়ার সম্পর্ক আছে মর্মে সম্পূর্ণ মিথ্যা ভ‚য়া বানোয়াট অভিযোগ তোলে এবং জুলেখাকে আরো বেশি নির্যাতন করতে থাকে।স্বামী সিরাজুলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে জুলেখা, বাবা ও ভাইসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আসামীর গ্রামে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।সালিশে জুলেখার কোনো দোষ না পেয়ে এবং পরকীয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় উক্ত সালিশে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সিরাজুল কে গালিগালাজ করে এবং জুলেখাকে নির্যাতন না করার জন্য সতর্ক করে দেয়।

 

এই ঘটনার পর স্বামী সিরাজুল আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং মনে মনে জুলেখাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ৫ ডিসেম্বর ২০০৩ তারিখে সিরাজুল ভিকটিমকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি সিংগাইরের উত্তর জামশা গ্রামে যায়। ৬ ডিসেম্বর ২০০৩ তারিখে স্বামী সিরাজুল ভিকটিম জুলেখাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে মানিকগঞ্জ শহরে নিয়ে যায় এবং বিভিন্ন অজুহাতে ইচ্ছাকৃতভাবে কালক্ষেপণ করে গভীর রাতে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে মানিকগঞ্জ শহর হতে রওনা হয়। মানিকগঞ্জ শহর থেকে স্বামী সিরাজুল ভিকটিমকে নিয়ে শশুর বাড়ি না গিয়ে কৌশলে তার শ্বশুর বাড়ির নিকটবর্তী কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়।এবং পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামি তার ব্যাগে থাকা গামছা বের করে স্ত্রী জুলেখার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে নদীর পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় জুলেখা নিহত হওয়ার পাশাপশি তার ৮ মাসের গর্ভস্থ সন্তানও হত্যার শিকার হয়।

 

পরবর্তীতে ৭ ডিসেম্বর ২০০৩ তারিখে থানা পুলিশ কর্তৃক জুলেখার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। একই দিনে উক্ত চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জুলেখার বাবা মোঃ আব্দুল জলিল বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় আসামি সিরাজুলসহ তার বড় ভাই রফিকুল, মা রাবেয়া বেগম, খালু শামসুল, চাচা ফাইজুদ্দিন ও তাইজুদ্দিন এবং মামা আবুল হোসেন সহ সর্বমোট ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-১৬(১২)০৩, তারিখঃ ০৭/১২/২০০৩, ধারা-২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এর ধারা ১১(ক)/৩০। সিংগাইর থানা পুলিশ উক্ত মামলার এজাহারনামীয় আসামি শামসুলকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে উক্ত আসামি ০৩ মাস হাজত খাটার পর জামিনে মুক্তি পায়। উক্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্ত শেষে এজাহারনামীয় আসামী জুলেখার স্বামী সিরাজুল, ভাসুর রফিকুল, শ্বাশুরী রাবেয়া এবং খালু শ্বশুর শামসুলসহ সর্বমোট ৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করে এবং এজাহারনামীয় বাকি ৩ জন আসামী ফাইজ উদ্দিন, তাইজুদ্দিন ও আবুল হোসেন এর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশীট থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। পরবর্তীতে চার্জশিটের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে জুলেখাকে হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ২০০৫ সালের শেষের দিকে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মোতাহার হোসেন চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামী মাঝে জুলেখার স্বামী আসামী সিরাজুলকে মৃত্যুদন্ড দেয় মানিকগঞ্জ আদালত।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত