পবিত্র রমজান মাস। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় দিনের বেলায় সিয়াম পালন করছেন। বৈশাখের এই সময়ে প্রচণ্ড তাপদাহে তাদের ওষ্ঠাগতপ্রাণ। একটু বৃষ্টি হলে হয়তো গরমের তীব্রতা কমে যাবে। রোজাদারসহ সবাই কিছুটা স্বস্তি পাবেন। কিন্তু আবহাওয়া অধিদফতর তিন দিনের আগে দেশবাসীর জন্য সেই আশার বাণী শোনাতে পারছে না। তাছাড়া এই গরমকে আবহাওয়া অধিদফতর তীব্র গরম মনে করছে না। তাদের বর্ণানায় এটি মৃদু গরম। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার শেষের দিকে সারাদেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রংপুর ও সিলেটের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের দেয়া সবশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, সারাদেশের দিনের ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এর আগে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে দেশে বৃষ্টির আশা নেই। তবে এরপরে দেশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তেঁতুলিয়ায় ২১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ছিল ২৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এ কারণে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশেই তাপপ্রবাহ প্রায় একই থাকলেও ঢাকায় অনুভূতিটা একটু বেশি। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, দিনের ব্যাপ্তিকাল রাতের তুলনায় বড়, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কম, অতিমাত্রায় এসির ব্যবহার, গাড়ির কার্বন বা কালো ধোঁয়া, রাজধানীর আশপাশের ইটভাটার কার্বন, বাতাসে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দূষিত পদার্থ।
তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ : দেশে বিরাজ করছে কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ফলে তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ। ক্রমাগত বৈশ্বিক ঊষ্ণায়নের প্রভাবে লঘুচাপ কমেছে বঙ্গোপসাগরে, আর কালবৈশাখীতেও দেখা নেই বৃষ্টির। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, অদ্ভুত আচরণ করছে এবারের গ্রীষ্মকাল। দুদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে, চলমান দাবদাহ কমা অনিশ্চিত। প্রখর উত্তাপ শুধু অনুভব নয়, চোখেও দেখা যায়। সপ্তাহখানেক তাপমাত্রা ঘুরছে ৩৭ থেকে ৪০ এর ঘরে। লকডাউনের পেরেশানি আর রোজার ক্লান্তির মাঝে নগরজীবনকে পোড়াচ্ছে গ্রীষ্ম।
মূলত রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া এবং খুলনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু অঞ্চলসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
২০১৭ সাল থেকে গত ৫ বছরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ বছর। এখন পর্যন্ত ৪১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে রাজশাহীতে। কিন্তু লকডাউনের এই সময়ে সারাদশে গাড়ি ও এসির ব্যবহার সীমিত থাকা সত্ত্বেও কেনো এতো ঊষ্ণতা? ১৮৮০ সাল থেকে এখন অবধি রেকর্ড অনুযায়ি বৈশ্বিক তাপামাত্রায় চলছে কেবলই বাড়ার প্রবনতা। সেই ধারায় গত ১৪০ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্তপ্ত বছর ছিলো ২০২০ সাল। চলতি বছরেও যার রেশ পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহারসহ গোটা উপমহাদেশে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত নভেম্বর থেকে প্রত্যেক মাসেই তাপমাত্রা ছিলো স্বাভাবিকের ১-২ ডিগ্রি বেশি।
আবহাওয়ার স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ী বৈশাখের এই সময়ে ১০ ভাগ বৃষ্টি হয়ে যাবার কথা থাকলেও হয়নি। আর বঙ্গোপসাগর থেকে যে আর্দ্রতার যোগান আসার কথা, তাও আসেনি তেমন। ঢাকার তাপমাত্রা আপাতত ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলেও অনুভূত হচ্ছে প্রায় ৪১। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউন শেষে সব প্রতিষ্ঠান ও গাড়ি চালু হলে আরো বাড়বে তাপদাহ। আর স্বাভাবিক বৃষ্টি না হবার যে প্রবনতা তা অব্যাহত থাকলে মে মাসের গরমও হতে পারে এপ্রিলের মতোই তীব্র। আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে এই সময়ের শুরুতে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।