যশোরসহ সারা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৌসুমের তীব্র তাপপ্রবাহ। প্রকৃতির এখন যেনো রুদ্রমূর্তি। তেতে ওঠা রোদ্দুরে যেনো আগুনের হল্কা ঝরছে। কয়েক দিন ধরে হঠাৎ বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমতে থাকায় তাপে পুড়ছে মাঠ, ঘাট, প্রান্তর। বাইরে-ঘরে কোথাও স্বস্তি নেই।
তীব্র তাপপ্রবাহে প্রকৃতিও নিস্তেজ। হাঁসফাঁস করছে মানুষ-প্রাণিকুল। তীব্র তাপপ্রবাহে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তীব্র গরমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। অগ্নিঝরা বাতাসের হল্কায় চোখ-মুখ পুড়ে যাওয়ার উপক্রম। নদী-নালা, খাল-বিল কোথায়ও পানি না থাকায় মানুষের চেয়ে পশু-পাখিরা আরো বেশি কষ্টে আছে। টানা বৃষ্টির জন্য হাহাকার চলছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা নেই!
টানা চার দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই জেলায় গত আট বছরের মধ্যে এটাই সবোর্চ।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন,আগামী বুধ-বৃহস্পতিবারের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। সে সময় গরম কিছুটা কমবে। তার আগ পর্যন্ত তীব্র তাপপ্রবাহ চলবে।
আবহাওয়াবিদ ও গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, ২৯ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত তীব্র তাপপ্রবাহ ভারত ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। এই চার দিন খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জেলায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
বিশেষ করে যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলায় দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করছে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো। দেশব্যাপী কালবৈশাখী শুরু হবে ২৯ এপ্রিল বিকালের পর থেকে। ২৯ এপ্রিল দিবাগত রাত ও ৩০ এপ্রিল দেশব্যাপী কালবৈশাখী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টানা তিন দিনের এই তাপপ্রবাহ ঢাকায় বেশ প্রভাব ফেলেছে। তবে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট অঞ্চলে তাপমাত্রা তুলনামূলক কম। এছাড়া দেশের বাকি অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ। রাজধানীসহ প্রায় সারা দেশেই পড়েছে অসহ্য গরম।
চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত আটটি তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এর মধ্যে দুটি রূপ নিয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহে। গত ১৫ এপ্রিল রাজশাহীতে থার্মোমিটারের পারদ উঠেছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রিতে, যা ছিলো গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর ২৪ এপ্রিল রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানিয়েছেন, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তত্সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে। বর্তমানে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী এবং পাবনা অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ; রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও পটুয়াখালী অঞ্চলসহ ঢাকা বিভাগ, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগ বাদে দেশের অন্য বিভাগগুলোতে তীব্র থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।