গত অর্থবছরের মতোই চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। করোনাভাইরাস মহামারিকালে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই দুই মাসে সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। ঘাটতি ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শুরু হয়েছিল। অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলছেন, গত বারের মতো এবারও রাজস্ব আদায়ে এক লাখ কোটি টাকার মতো ঘাটতি থেকে যাবে। মহামারির মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ায় রাজস্ব আহরণ গতি হারালেও চলতি অর্থ-বছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আগের চেয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী, যা ‘অবাস্তব’ বলে তখনই প্রতিক্রিয়া এসেছিল অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে। দুই মাসের হতাশাজনক চিত্র দেখে আহসান মনসুর বুধবার রাতে বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের এই হাল হবে, এটা তো সবারই জানা। মহামারিকালে মানুষের আয়-উপার্জন কম। ব্যবসা-বাণিজ্য কমে গেছে। আমদানিও কম। তাহলে ট্যাক্স আসবে কোত্থেকে? বাজেটে যখন বিশাল লক্ষ্য ধরা হয়, তখনই তো বলেছিলাম, এটা অবাস্তব-কাল্পনিক লক্ষ্যমাত্রা। কখনই আদায় সম্ভব নয়। উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ধরলে তো এমন হবেই।’ ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১২ হাজার ৩৩৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৩৭৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মূল্যসংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। এছাড়া আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই-আগস্ট সময়ে ভ্যাট থেকে ১৫ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১০ হাজার ২০ কোটি টাকা এবং আমদানি শুল্ক থেকে ১৫ হাজার ২৬২ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল। এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, এই দুই মাসে ভ্যাট থেকে ৯ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ৮ হাজার ৮০৩ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে আদায় হয় ২ লাখ ১৮ হাজার ৪০৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৯৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ভাবনাকে ‘বোকামি’ বলে মন্তব্য করেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ রাজস্ব আদায় বাড়াতে ব্যাপক সংস্কারের উপর জোর দিচ্ছেন। কর বন্ধ করতে কঠোর হতে বলেছেন। একই সঙ্গে মামলাজটে বিশাল অঙ্কের যে কর আটকে আছে, সেই টাকা আদায়েও জোর দিতে বলেছেন তিনি। মজিদ বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর এই কঠিন পরিস্থিতিতে যে সব খাত ভালো করছে, তাদের কাছ থেকে বেশি কর আদায় করতে হবে; আর যারা খারাপ করছে তাদের ছাড় দিতে হবে।’ সূত্র বিডিনিউজ