আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ৯:০৫

দুদকের মামলার জালে সাবেক পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শার্শার মাবুদ সাহেব


খানজাহান আলী নিউজ 24/7ঃ স্ত্রী ও শাশুড়ির সহায়তা নিয়েও অবৈধ উপায়ে অর্জিত পৌনে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ লুকাতে পারেননি সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল মাবুদ। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আবদুল মাবুদ ও তাঁর স্ত্রী নাসিমা খানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
মামলায় বলা হয়, আবদুল মাবুদ অবৈধভাবে অর্জিত ৪ কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ২১৬ টাকা মূল্যের সম্পদের অবৈধ উৎসকে বৈধ দেখানোর উদ্দেশ্যে স্ত্রী নাসিমা খানের নামে মিথ্যা ও জাল নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও হলফনামা নামা করে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকার মিথ্যা ‘দান’ ও ‘ঋণ’ দেখিয়েছেন। এ ছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৪ কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ২১৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ৪ কোটি ৬২ লাখ ৬১ হাজার ৮৯৫ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে আমানত রেখে তা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তুলেও নেন।

দুদক সূত্র জানায়, আবদুল মাবুদ তাঁর আয়কর হিসাব ও দুদকে দেওয়া সম্পদের হিসাব বিবরণীতে দেখান যে তিনি তাঁর স্ত্রী নাসিমা খানের কাছ থেকে ‘দান’ হিসেবে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা পেয়েছেন। নাসিমা খানের এই টাকার উৎস তাঁর মা সাহানারা খান অর্থাৎ আবদুল মাবুদের শাশুড়ি। ২০০৩ সালে সাহানারা খান মেয়ে নাসিমা খানকে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ‘দান’ হিসেবে দেন; যা একপর্যায়ে সুদে-আসলে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা হয়।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মূলত অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বৈধ করতে আবদুল মাবুদ জাল হলফনামা ও স্ট্যাম্প দিয়ে দানপত্র তৈরি করেন।

অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল মাবুদের শাশুড়ি সাহানারা খান জানান, তাঁর স্বামী আকরাম খানের রেখে যাওয়া অর্থ থেকে তিনি ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা মেয়েকে দান করেন। দানের সময় ছিল ২০০৩ সাল। আকরাম খান মারা যান ১৯৮৩ সালে। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে এত বছর ওই টাকা কোথায় ছিল এবং সেই টাকার উৎস কী, তার উপযুক্ত তথ্য দিতে পারেননি সাহানারা খান। দুদক নিশ্চিত হয়েছে যে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের বিভিন্ন সময়ে করা এফডিআর বৈধ করতেই জাল হলফনামা ও জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করে দানপত্র তৈরি করেন। এ প্রক্রিয়ায় ২০১৬ ও ২০১৭ সালে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা দানসূত্রে মালিক হয়ে তা আয়কর রিটার্নেও প্রদর্শন করেন।

মামলায় দুদক বলেছে, অভিযুক্ত আবদুল মাবুদ ও তাঁর স্ত্রী নাসিমা খানের নামে ৪৩টি এফডিআরে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৯৪ হাজার ৯৪৩ টাকা, নাসিমা খানের নামে ধানমন্ডির ফ্ল্যাট ক্রয়ে ৫৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, জমি ক্রয়সহ পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণে ব্যয় ৪৪ লাখ ৫৪ হাজার ৫১৩ টাকা, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ করা ফ্ল্যাট বাবদ ব্যয় ৬৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন আয়ের উৎস গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া নাসিমা খানের মায়ের দেওয়া ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা দান, নাসিমা খানের ভাইবোনদের ৩ কোটি ১ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা ফেরত দেওয়া, নাসিমা খানের ভাই মো. ফজল করিম খান নাসিমা খানকে মৌখিক ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ৫৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা মূল্যের ধানমন্ডির ফ্ল্যাট দান, নাসিমা খানের নামে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণে ব্যয় বাবদ ৪৪ লাখ টাকা ধার দেখানো—সবই জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা ও ভুয়াভাবে নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সৃজন করে হলফনামা সম্পাদন করা হয়েছে বলে নথিপত্রে দেখা যায়।

এসব তথ্য উল্লেখ করে দুদকের উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ ১৬ জুন মামলাটি করেন।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত