দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৪২তম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্তের হার কমেছে, বেড়েছে সুস্থতার হার। পাশাপাশি কমেছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
গত ২৪ ঘন্টায় ১২ হাজার ৮৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৭৭২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গতকাল ১০ হাজার ৭৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ২৭৫ জন। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় এই হার ছিল ২২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ কম।
দেশে এ পর্যন্ত মোট ১১ লাখ ২৪ হাজার ৪১৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ২৬ হাজার ২২৫ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ১২ শতাংশ।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮০১ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৯ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৭৯২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৩ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার ১ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি।
তিনি জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৩৭ জন মারা গেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ১৭ জন কম মারা গেছেন । গতকাল মারা গেছেন ৫৪ জন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মারা গেছেন ২ হাজার ৯৬৫ জন। শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১২ হাজার ৫৪৪ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১০ হাজার ৪৪১ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ২ হাজার ১০৩টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮১টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৮৫৯ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১০ হাজার ৭৮ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ২ হাজার ৭৮১টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, ৩৭ জনের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৩ জন এবং বাড়িতে মারা গেছেন ৪ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৬ জন এবং নারী ১১ জন। এ পর্যন্ত পুরুষ মারা গেছেন ২ হাজার ৩৩২ জন, যা ৭৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং নারী মারা গেছেন ৬৩৩ জন, যা ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের বয়স বিভাজনে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৮ জন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত বয়স বিভাজনে মৃত্যু হয়েছে শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৮ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩০ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৯৮ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪২২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৮৫৯ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ১ হাজার ৩৫৪ জন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগ ভিত্তিক মৃতের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে ২৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ জন, খুলনাতে ২ জন, ময়মনসিংহে ১ জন, রংপুরে ৩ জন এবং বরিশাল বিভাগে ২ জন। বিভাগ ভিত্তিক এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৪৩২ জন, চট্টগ্রামে ৭২৬ জন, রাজশাহীতে ১৭৪ জন, খুলনাতে ২০৮ জন, বরিশালে ১১২ জন, সিলেটে ১৪০ জন, রংপুরে ১১১ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬২ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১৩৪ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৭২ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩০৯ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৮ জন।
সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭০০ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯৪ জন। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ১৮২টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ১৪৩ জন এবং শয্যা খালি আছে ১১ হাজার ৩৯টি।
সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৩৩টি, রোগী ভর্তি আছে ২৮৪ জন এবং খালি আছে ২৪৯টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৪১টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩০৫টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১১২টি।
দেশের লিকুইড অক্সিজেন ট্যাঙ্কের তথ্য তুলে ধরে নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘২০২০ সালের আগে বিভিন্ন হাসপাতালে স্থাপিত লিকুইড অক্সিজেন ট্যাঙ্ক ছিল ২২টি। সম্প্রতি ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ) ছয়টি লিকুইড অক্সিজেন ট্যাঙ্ক স্থাপন করেছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরও সম্প্রতি একটি লিকুইড অক্সিজেন ট্যাঙ্ক স্থাপন করে। নিজস্ব উদ্যোগে সরকারি হাসপাতালে স্থাপিত অক্সিজেন প্ল্যান্ট বা লিকুইড অক্সিজেন ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হয়েছে একটি। নিমিউ’র অধীনে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাঙ্ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে ২০টি প্রতিষ্ঠানে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে ২৩টি প্রতিষ্ঠানে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাঙ্ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।’
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ৫৫০ জন, আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৬৭৫ জন। মোট আইসোলেশনে গেছেন ৪৭ হাজার ৭৭৬ জন, ছাড়া পেয়েছেন ২৮ হাজার ৭৬৯ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৯ হাজার ৭ জন।
তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৫১ জন, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে গেছেন ৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৯৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ৮৬০ জন, আর এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬০৭ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৮ হাজার ৩৯০ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোভিড ১৯ বিষয়ক সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১৩ হাজার ৭০৬টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৯১টি, কাভার অল (পিপিই, গাউন, এপ্রোন, সুপ্রটেক্টর) ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১৬ হাজার ৮৫টি এবং ফেইসশিল্ড ও গগলস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ করা হয়েছে ৭ হাজার ৫১৬টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৯৭৭টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৩৮৮টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইনে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৯০টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার ৪৫৫টি।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৬২৯ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৪০০ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্য কর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ২ হাজার ২৮৬ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৮২ হাজার ৫১২ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৬ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩ হাজার ২৫৪ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ লাখ ৩২ হাজার ২৪৮ জন। ২৪ ঘন্টায় ৭৯৩ জন এবং এ পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৭৮৬ জন মারা গেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৬ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬২৫ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৫ হাজার ৬৪১ জন। ২৪ ঘন্টায় ৪ হাজার ৮২৩ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৪০ হাজার ১৬ জন মারা গেছেন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।