লকডাউনের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে মদের পার্টি কেলেঙ্কারি, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রচণ্ড চাপের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করতেই বাধ্য হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতাদের একের পর এক পদত্যাগের পর দেশটির সরকারে কার্যত নিঃসঙ্গ হয়ে পড়া জনসন বৃহস্পতিবার এই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে জনসন বলেন, ‘দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণের প্রক্রিয়া এখন থেকেই শুরু করা উচিত। আর নতুন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাসীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই অন্তর্বর্তী সময়ে একটি নতুন মন্ত্রিসভা নিয়োগ নিয়োগ করা হবে। আজ থেকেই এই বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করব আমি।
নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিজ দলের মন্ত্রী এবং সদস্যদের তোপের মুখে পড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী যে পদত্যাগ করছেন, তা বুধবারই চাউর হয়ে গিয়েছিল যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সংবাদমাধ্যমে। এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছিল, শিগগিরই পদত্যাগের ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন বরিস জনসন।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি নিজের দল কনজারভেটিভ পার্টির শীর্ষ নেতার পদ থেকেও তিনি অব্যাহতি নেবেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
পদত্যাগের ঘোষণায় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদে আর থাকতে না পারার জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন বরিস জনসন। নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে কনজারভেটিভ পার্টিতে একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন ব্রিটিশ এই প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে দলটির জ্যেষ্ঠ সব মন্ত্রী এবং মিত্ররা সরে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর পদে টিকে থাকাটাই তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
গত কয়েক দিন ধরে এই পদ আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু ঘনিষ্ঠ সব মন্ত্রী এবং মিত্রদের একের এক পদত্যাগের কারণে সরকার পরিচালনায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বিষণ্ণ মনে পদত্যাগের ঘোষণায় তিনি বলেন, অবশ্যই, এতসব ধ্যান-ধারণা আর প্রকল্পে নিজেকে দেখতে না পারাটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
তবে এই দুই গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও আগামী শরৎকাল পর্যন্ত দেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। চলতি গ্রীষ্মে কনজারভেটিভ দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং আগামী অক্টোবরে টরি পার্টির সম্মেলনে নির্বাচিত দলীয় প্রধান নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন।
বৃহস্পতিবার মাত্র দুই ঘণ্টায় জনসনের নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্তত ৮ মন্ত্রী, দুই প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। দেশটির মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সরকারের অন্তত ৫০ শীর্ষ সহযোগী পদত্যাগ করায় জনসন কার্যত ‘একাকী এবং ক্ষমতাহীন’ হয়ে পড়েন। যে কারণে ক্ষমতাহীন জনসনের নতি স্বীকার করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়া অনিবার্য হয়ে পড়ে।
২০২০ সালের মে মাসে যুক্তরাজ্যে যখন করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম ঢেউ চলছিল, সেই সময় বেশ কয়েকজন অতিথির জন্য লন্ডনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে নিজের সরকারি বাসভবনে পার্টির আয়োজন করেছিলেন ব্রিটিশ এই প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাজ্যের প্রথম লকডাউনের মধ্যে আয়োজিত সেই পার্টিতে শতাধিক অতিথি আমন্ত্রিত ছিলেন এবং সবাইকে যার যার মদ আনার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
পার্টিতে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ই-মেইলের মাধ্যমে। গত জানুয়ারিতে ইমেইলটি ফাঁস হয় এবং তা থেকে জানা যায় ২০২০ সালের ২০ মে আয়োজন করা হয়েছিল সেই গার্ডেন পার্টির। গণমাধ্যমে এই ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর পার্লামেন্টের বিরোধী দল লেবার পার্টির এমপিরা জনসনের পদত্যাগ দাবি করেন। দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যেও তার জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ভাটা পড়ে।