আজ - রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৯:৩৩

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা।

আন্দামান সাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘনীভূত হয়ে ক্রমান্বয়ে নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আগামী ২২ অক্টোবরের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। ২৪ অক্টোবর তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে সাবধানতার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

এর আগে চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসেও আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, অক্টোবরে একটি থেকে দুটি লঘুচাপ হতে পারে, যার একটি রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে এবার তার নাম হবে ‘সিত্রাং’। থাইল্যান্ডের দেওয়া এ শব্দের অর্থ ‘পাতা’।

কানাডার সাসক্যাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ গত ৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম বা জিএফএসসহ বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়া মডেলের পূর্বাভাসের ভিত্তিতে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার খবর দেন ফেসবুকে। বিষয়টি সোশাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দেয়। তবে এ নিয়ে ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই গবেষকের সমালোচনা করে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কার কথা উড়িয়ে দেয়। এরপরও ওই গবেষক গত ১৩ দিনে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে ১৪টি আপডেট দেন। অবশ্য গতকাল ভারতীয় সব গণমাধ্যম ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্ভাবাস দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে।

গত ১১ অক্টোবর জিএফএসের পূর্বাভাস মডেলে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিমুখ দেখানো হয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা রাজ্যের দিকে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুরে সেটি দেখানো হয় বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় এলাকার দিকে। অবশ্য পরিস্থিতি অনুযায়ী এই গতিপথও বদলে যেতে পারে বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদেরা।

নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় যে আকারেই ওই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র উপকূলে আসুক, তার প্রভাবে বৃষ্টি হবে। আর ২৪ অক্টোবর রাতের অমাবস্যা তিথির যোগ পেলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা হবে তুলনামূকভাবে বেশি।

গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ‘নিম্নচাপটি আগামী ২৩ অক্টোবরের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। প্রবেশের সময় নিম্নচাপটির কেন্দ্র যদি বরিশাল, খুলনার উপর অবস্থান করে তবে এই অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সেই সঙ্গে আগামী ২৪ অক্টোবর যেহেতু অমাবশ্যা সেই কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলে এই সময় (২৪ ও ২৫ অক্টোবর) ৫ থেকে ৮ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা যেতে পারে।’

যেসব মৎস্যজীবীরা সাগরে মাছ ধরেন, তাদেরকে ২২ অক্টোবরের আগেই সাগর থেকে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। সেই

সঙ্গে এসব এলাকার চাষিদের আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ তারিখে জমিতে সার প্রয়োগে না করার পরামর্শ তার।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সরকার সতর্ক আছে। সিদ্ধান্ত এলে প্রস্তুতির বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আরো সংবাদ