রবিউল আওয়াল, বরিশাল প্রতিনিধি: বরিশালে কর্মরত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজের ক্যামেরাপার্সন সুমন হাসানকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। এ অভিযোগ বরিশাল মহানগর ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের আট সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে রিপোর্ট অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) গোলাম রউফ।
মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিণ চকবাজারের বিউটি সিনেমা হলের সামনে গোয়েন্দা পুলিশ একটি বাসায় মাদকের অভিযান চালালে সাংবাদিক সুমন হাসান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। অভিযানের বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আট পুলিশ সদস্য সুমনের ওপর চড়াও হয়ে বেধড়ক মারধর করে তাদের গাড়িতে তুলেও নির্যাতন করে। পরবর্তীতে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে পুনরায় তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর করা হয়।
খবর পেয়ে বরিশালের সংবাদকর্মীরা উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রউফকে অবহিত করলে তিনি ও উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) উত্তম কুমার পাল বিষয়টি সমাধানের জন্য সকলকে তার কক্ষে নিয়ে আসেন। এসময় সুমনের সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও সুমনের কাছে নির্যাতনের কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন। তারা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ডিবি পুলিশের এসআই আবুল বাশার ও তার টিমকে তাৎক্ষণিক ক্লোজড ও ওই টিমের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে রিপোর্ট অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
নির্যাতনের শিকার বেসরকারি টেলিভশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজের ক্যামেরাপার্সন সুমন হাসান উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, বিউটি হল সংলগ্ন একটি বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় তাদের কাছে অভিযানের বিষয়টি জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের এসআই আবুল বাসার ও তার টিমের সদস্যরা আমার ওপর চড়াও হয়। তখন আমি সাংবাদিক পরিচয় দিলে তারা আমার ওপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে তারা আমাকে বেধড়ক মারধর শুরু করে এবং ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোড় জবরদস্তি করতে থাকে। এসময় ডিবি পুলিশ আমার বাসায় মাদক দিয়ে ধরিয়ে দেয়াসহ ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়। তবে আমি বিনা অপরাধে সেখানে না যাওয়ার জন্য বললে তারা আমার অণ্ডকোষ চেপে ধরে এবং সঙ্গেসঙ্গেই আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। তারপর আমাকে ডিবি অফিসে নিয়ে বুকের ওপর লাথি দেয়াসহ নানা কায়দায় নির্যাতন শুরু করা হয়।
এদিকে সুমনকে নির্যাতনের খবর শুনে বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিকরা ডিবি অফিসে গেলে কতিপয় অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সেখানে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে কয়েকজন সংবাদকর্মীকে লাথি, কিল-ঘুষিও দেয়া হয়, যা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও প্রমাণ পেয়েছেন।
তবে এতো ঘটনার পরেও সবকিছুই অস্বীকার করেছেন ডিবি পুলিশের ওই টিমের প্রধান এসআই আবুল বাশার। তিনি জানিয়েছেন, সুমনের শরীরে কোনো হাত দেয়া হয়নি। উল্টো সুমন আমাদের মারধর করেছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার নাসির উদ্দিন মল্লিক জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। প্রাথমিকভাবে নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়ায় এসআই আবুল বাশারসহ তার টিমের মোট আট সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে। যার মধ্যে দুইজন এএসআই ও বাকিরা কনস্টেবল।
এদিকে এই ঘটনায় বরিশালের সাংবাদিকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বরিশাল প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সকল সাংবাদিক সংগঠন তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এছাড়াও সাংবাদিক সুমন হাসানের ওপর হামলার ঘটনায় বরিশাল ফটো সাংবাদিক ঐক্য পরিষদ বুধবার সকালে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে।