কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ৭১ স্ল্যাবের ব্যতিক্রম স্বাধীনতা সৌধটিতে সাধারণ দৃষ্টিতে তাকালে মনে হবে কিছু বর্গাকার বাক্স এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। তিন দিকে লোহার বেদি। পূর্বদিকে রাণী দিঘির অংশটি খোলা। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা এ স্বাধীনতা সৌধের দিকে তাকালে স্বাধীন দেশের একটি প্রতিছবি দেখতে পারবে। ব্যতিক্রম এমন এক স্বাধীনতা সৌধ রয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখার রাণী দিঘির পাড়ে অবস্থিত।
কলেজ ও বিভিন্ন গ্রন্থের সূত্রমতে, ১৯৯৫ সালের ২৬ মার্চ এ স্বাধীনতা সৌধটি উদ্বোধন করা হয়। যার দৈর্ঘ্য ৭২ ফিট, প্রস্থ ১৭ ফিট। এখানে মোট ৭১টি বর্গাকার স্ল্যাব রয়েছে। প্রতিটি স্ল্যাবের দৈর্ঘ্য দুই ফুট চার ইঞ্চি ও প্রস্থ দুই ফুট চার ইঞ্চি । সৌধে প্রবেশে উত্তরমুখী একটি বর্গাকৃতি স্ল্যাব। যা বাঙালি চেতনা পয়লা বৈশাখকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এর সাথেই রয়েছে দুটি গর্তের আদলে স্ল্যাব। ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বহু আন্দোলন সংগ্রাম ইতিহাস ধারণ করতে পারেনি, তাই এ স্ল্যাবগুলো গর্তে ডুবে আছে।
এরপর রয়েছে স্তরে স্তরে সাজানো সাতটি স্ল্যাব, যা ৭ মার্চকে বুঝানো হয়েছে। এর দক্ষিণে রয়েছে এলোমেলোভাবে সাজানো ২১টি বর্গাকার স্ল্যাব, যা ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বহণ করে। পাশেই রয়েছে ২৬টি বর্গাকার স্ল্যাব, যা স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামের নিদর্শন। সর্বশেষ রয়েছে ১৬টি বর্গাকার স্ল্যাব, যা বিজয়ের প্রতীক হিসাবে পরিগণিত করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া দুটি স্ল্যাব বাদ দিলে, মোট স্ল্যাব সংখ্যা ৭১টি।
ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সবুজ ও একাদশ শ্রেণির তাবাসুম মিম বাসসকে বলেন, উচ্চমাধ্যমিক শাখায় স্বাধীনতা সৌধটির ৭১টি স্ল্যাবের তাকালে আমাদের স্বাধীন দেশটির একটি প্রতিছবি দেখতে পাওয়া যায়।
কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান বলেন, নান্দনিক এ স্থাপত্যটি ওল্ড ভিক্টোরিয়ান্সদের সহযোগিতায় নির্মাণ করা হয়েছে। বুয়েটের অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ এ সৌধের ডিজাইন বিনামূল্য তৈরি করে দেন। কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই প্রকৌশলী আবুল হাসেম এটি তৈরি করে দেন।
প্রসঙ্গত, ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এ কলেজের তিনশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।