স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে রাজধানীর বায়তুল মোকাররমসহ সারা দেশে হামলা ও তাণ্ডব চালানোর নির্দেশদাতা হিসেবে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ ১৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিন হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পল্টন থানায় আরিফ-উজ-জামান নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে গতকার সোমবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এই মামলা করেন। মামলা নম্বর আট।
জানা গেছে, মামলার বাদী আরিফ-উজ-জামান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক সোমবার দিবাগত রাতে মামলার তথ্য এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় সারা দেশে নাশকতা, তাণ্ডব, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কথা বলা হয়েছে। সেখানে জামায়াত-শিবির-বিএনপির লোকজনদেরও অভিযুক্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মামলায় বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা, সংবিধান লঙ্ঘন ও সরকার উৎখাতের পরিকল্পনার অভিযোগও আনা হয়েছে।
ওসি জানান, হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। পুরান ঢাকার এক বাসিন্দা বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মামলায় হেফাজতে ইসলামের আসামিরা হলেন মাওলানা মামুনুল হক (যুগ্ম মহাসচিব), মাওলানা ফলায়েদ আল হাবিব (যুগ্ম মহাসচিব), মাওলানা লোকমান হাকিম (যুগ্ম মহাসচিব), নাসির উদ্দিন মনির (যুগ্ম মহাসিচব), মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া (নায়েবে আমির), মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী (মাথজান, ঢাকা), মাজেদুর রহমান (নায়েবে আমির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা হাবিবুর রহমান (লালবাগ, ঢাকা), মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা জসিম উদ্দিন (সহকারী মহাসচিব, লালবাগ), মাওলানা মাসুদুল করিম (টঙ্গী, সহসাংগঠনিক), মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী (অর্থ সম্পাদক), মাওলানা যাকারিয়া নোমান ফয়েজী (প্রচার সম্পাদক), মাওলানা ফয়সাল আহমেদ (মোহাম্মদপুর, ঢাকা), মাওলানা মুশতাকুন্নবী (সহকারী দাওয়াহ সম্পাদক), মাওলানা হাফেজ মো. জোবারের (ছাত্র ও যুব সম্পাদক) ও মাওলানা হাফেজ মো. তৈয়ব (দপ্তর সম্পাদক)।
মামলার এজাহারে বাদী আরিফ-উজ-জামান বলেন, গত ২৬ মার্চ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যাই। ফরজ নামাজ শেষে মসজিদের ভেতর কিছু উচ্ছৃঙ্খল, ধর্মান্ধ ব্যক্তিকে জুতা প্রদর্শনসহ বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিতে দেখি। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে বাইরে উত্তর গেটের সিঁড়িতে কয়েক হাজার জামায়াত-শিবির, বিএনপি, হেফাজতের উগ্র মৌলবাদী ব্যক্তিদের উচ্ছৃঙ্খল জমায়েত দেখতে পাই।
আরিফ-উজ-জামান বলেন, তাদের স্লোগান ও কথোপকথন থেকে জানতে পারি যে, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বে শীর্ষ স্থানীয় জামায়াত-শিবির, বিএনপি, হেফাজতের নেতারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে দেশি-বিদেশি সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিকে বানচাল করতে সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করে।
এজাহারে বলা হয়েছে, তারা দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ দা, ছুরি, কুড়াল, কিরিচ, হাতুড়ি, তলোয়ার, বাঁশ, গজারি লাঠি, শাবল ও রিভলবার, পাইপগানসহ অন্যান্য অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাধারণ মুসল্লিদের ওপর হামলা করে।
আরিফ-উজ-জামান অভিযোগ করেন, হেফাজতের নেতা মাওলানা মামুনুল হকের নির্দেশে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব তাঁর হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করেন। পরে তিনি আমার ডান হাঁটু পিটিয়ে জখম করেন। এ সময় আমি মাটিতে পড়ে গেলে মাওলানা লোকমান হাকিম ও নাসির উদ্দিন মনির তাঁদের হাতে থাকা বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। একপর্যায়ে মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া তাঁর হাতে থাকা ধারালো কিরিচ দিয়ে আমার মাথার পেছনে আঘাত করেন। পরে নুরুল ইসলাম জিহাদী বাঁশের লাঠি দিয়ে বাম বাহুতে পেটান।
স্থানীয় জনতার শক্ত প্রতিরোধের কারণে হেফাজতের নেতাকর্মীরা পিছু হটে এবং দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া তারা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের আশপাশের দোকানে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। আসামিরা বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে।