যশোরের দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারের মাঝে ১৬ কোটিরও বেশি পরিমাণ নগদ অর্থ বিতরণ হচ্ছে। আসন্ন পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে এই টাকা দিচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে রমজান উপলক্ষে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। আর ঈদের জন্য পরিবার প্রতি পাবে ৪৫০ টাকা করে। বর্তমানে জেলার প্রায় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৮টি দরিদ্র পরিবার সরকারি এই নগদ অর্থ সহায়তা পাচ্ছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এই অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।
জানা গেছে, নগদ এই অর্থ সহায়তার উপকারভোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশকিছু শর্ত অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। আর এক্ষেত্রে উপকারভোগীদের তালিকায় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থ ও অতিদরিদ্র ব্যক্তি বা পরিবারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি তালিকায় কমপক্ষে শতকরা ৭০ ভাগ নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এমনকি একই পরিবারের একাধিক সদস্য যাতে ভিজিএফ কার্ডের বরাদ্দ না পায় সেটিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বরাদ্দকৃত অর্থ সহায়তা বিতরণে অনিয়ম রোধে এরকম বেশকিছু শর্ত মেনে চলতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এছাড়া কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি যাতে না হয় তার জন্য তৎপর থাকবে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। এক্ষেত্রে প্রশাসনের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার নজরদারি থাকবে।
যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্র জানায়, পবিত্র রমজান উপলক্ষে যশোরের আট উপজেলায় ২ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ইউনিয়নের দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারের সাহায্যার্থে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আর এসব ইউনিয়নের দরিদ্র ও দুস্থ ব্যক্তিদের তালিকা করে পরিবার বা ব্যক্তি প্রতি নগদ ৫০০ টাকা করে বিতরণ করা হবে।
সূত্র মতে, ওই পরিমাণ নগদ অর্থের মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া মণিরামপুরে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কেশবপুরে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, শার্শায় ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ঝিকরগাছায় ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, চৌগাছায় ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বাঘারপাড়ায় ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও অভয়নগরে ২০ লাখ টাকা। এদিকে, যশোর, কেশবপুর, নওয়াপাড়া, বেনাপোল ও মণিরামপুর পৌরসভায় ২ লাখ টাকা করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঝিকরগাছা ও চৌগাছা পৌরসভা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও বাঘারপাড়া পৌরসভা ১ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে।
এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যশোরের ৮ উপজেলায় নগদ অর্থ সহায়তার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ কোটি ৯৮ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ টাকা। এসব এলাকায় দুস্থ ও দারিদ্র্য পরিবারের তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা জনপ্রতি ৪৫০ টাকা করে অর্থ সহায়তা পাবেন। এরমধ্যে যশোর সদর উপজেলায় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ৯২ হাজার ৮৫০ টাকা। এছাড়া ঝিকরগাছায় ২ কোটি ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা, চৌগাছায় ২ কোটি ১০ লাখ ৩০ হাজার ৭৫০ টাকা, অভয়নগরে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৫০ টাকা, মণিরামপুরে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯২ হাজার ৯০০ টাকা, কেশবপুরে ৬৮ লাখ ৮ হাজার ৫০০ টাকা, শার্শায় ৯০ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা ও বাঘারপাড়ায় ৪৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫০ টাকা।
এছাড়া যশোর, নওয়াপাড়া, কেশবপুর, মণিরামপুর ও বেনাপোল পৌরসভার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫০ টাকা। ঝিকরগাছা ও চৌগাছা পৌরসভায় ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫০ টাকা এবং বাঘারপাড়া পৌরসভায় ৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারি নির্দেশনার আলোকে অর্থ সহায়তা বিতরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে উপকারভোগীর তালিকা প্রস্তুত চলছে। এক্ষেত্রে চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে রমজান উপলক্ষে বরাদ্দকৃত টাকা বিতরণের সরকারি নির্দেশ রয়েছে। এছাড়া পবিত্র ঈদুল ফিতরে উপকারভোগীর তালিকা প্রস্তুত করে আগামী ১ মে তারিখের মধ্যে উপ-বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করে বিতরণ করতে বলা হয়েছে।
যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কেএম মামুনুর রশীদ জানান, উপকারভোগী বাছাইয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশ ও শর্ত মোতাবেক তালিকা প্রস্তুত চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকৃত ও যোগ্যদের কাছে সরকারের এই অর্থ সহায়তা প্রদান করা হবে। এদিকে অর্থ সহায়তা বিতরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার বিষয়ে এই কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জানান, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রকৃত উপকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে বরাদ্দকৃত ভিজিএফ’র অর্থও বিতরণ করা হয়। ফলে অনিয়ম হবার সুযোগ কম। তারপরও এবার যাতে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি না হয় সেজন্য প্রক্রিয়াটি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে।
সূত্র – সমাজের কথা