আজ - শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - দুপুর ২:৩৫

রুদ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়- ভেঙ্গে বিক্রি হয়ে গেল পুরানত ভবন জানেনা শিক্ষা অধিদপ্তর-কতটা নিরাপদ নতুন ভবন?


“তুই চাকর চাকরের মত থাকবি ” : প্রধান শিক্ষক কে লুৎফর।
ভবনটির পুরাতন মালামালের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১ লক্ষ টাকা : ঠিকাদার।


মুনতাসির মামুন:    ২০১৫ সালের  ৪ সেপ্টেম্বর যশোরের ৬ উপজেলার ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে মর্মে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর । তার মধ্যে ৫টি কলেজ, ৪টি মাদ্রাসা ও ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের কথা উল্ল্যেখ করা হয়।  যশোর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সেই প্রতিবেদনে, জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে যশোর সদর উপজেলার  রুদ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ  খয়েরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন, খোজারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, , কুয়াদা দারুল সুন্নাহ মাদ্রাসা ও খাজুরা এনএম দারুল মাদ্রাসা ভবন। অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া কলেজ, শংকরপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মশিয়াহাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পায়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাজঘাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সিদ্ধিপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মহাকাল পাইলট স্কুল এ্যান্ড কলেজ ভবন। ঝিকরগাছার বাঁকড়া জেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন। কেশবপুরের সুজলাকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাইলট স্কুল, বিদ্যানন্দকাটি বিয়ড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মঙ্গলকোট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কেশবপুর বাহারুলপুর কামিল মাদ্রাসা ভবন, মণিরামপুর ডিগ্রি কলেজ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এআরএম কলেজ, নেহালপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজ, রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মণিরামপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়, নেগুড়াহাট ফাজিল মাদ্রাসা পলাশী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন, বাঘারপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, পাইলট বালিকা বিদ্যালয়, নাড়িকেলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ভাংগুড়া আদর্শ ডিগ্রী কলেজ ভবনের কথা উল্ল্যেখ করা হয়।

সম্প্রতি ৩ তলা বিশিষ্ট একটি নতুন ভবন নির্মানের অনুমোদন মিললে গেল মঙ্গলবার হটাৎ করেই রুদ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙ্গে ভবনের পুরতান ইট, টিন, লোহার এ্যাঙ্গেলবার বিক্রয় করে দিয়েছেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান। কমিটির অন্য সদস্যদের না জানিয়ে কোন রেজুলেশন তৈরি না করেই ভবনের মালামাল বিক্রয়ে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে।

ঘটনা গণমাধ্যমে গড়ালে তড়িঘড়ি করে (২৪ মে) শুক্রবার আব্দুর রহমান প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির ৩ জন সদস্যকে ডেকে একটি রেজুলেশন তৈরি করেছেন।কোন রেজুলেশন ছাড়াই ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের না জানিয়ে কি প্রক্রিয়ায় মালামাল গুলো বিক্রয় করলেন প্রশ্নের জবাবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন পনের (১৫) হাজার টাকায় বিক্রি করে তা স্কুল ফান্ডে রেজুলেশন করে জমা দেয়া হয়েছে। সেই রেজুলেশনে ভবন ভাঙ্গার কথা উল্ল্যেখ করলেও ভবনের মালামাল বিক্রয়ের টাকার পরিমাণ উল্ল্যেখ করেননি সভাপতি। এদিকে স্থানীয় ঠিকাদারদের মতে ভবনটির পুরাতন মালামালের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১ লক্ষ টাকা।

অন্যদিকে ভবন টি ভাঙ্গার বিষয়ে জেলা শিক্ষা অধিদপ্তর ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা বিষয়টি জানেননা বলে সাংবাদিকদের জানান।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দ্বায়িত্ব পাবার পর থেকে সভাপতি রহমান এবং দুই সদস্য লুৎফর ও হালিম স্কুলের শিক্ষকদের সাথে প্রায়ই অশোভন অপমানজনক আচারন করে আসছেন।দ্বায়িত্ব গ্রহনের প্রাক্কালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আ: রহমান ও সদস্য লুৎফর প্রধান শিক্ষকের কক্ষে উচ্চবাচ্চ করেন এ সময় লুৎফর প্রধান শিক্ষক মিনাল কান্তিকে বলেন  “তুই চাকর চাকরের মত থাকবি ”। এ দিন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন প্রধান শিক্ষক মিনাল কান্তি।

এখানেই শেষ নয় , যশোরের হাসান বুক ডিপো থেকে তাঁদের পুস্তক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চালিয়ে দেয়ার কথা বলে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন রহমান। সে টাকার গন্তব্য কোথায় জানতে চাইলে রহমান বলেন প্রধান শিক্ষক সহ অনান্য শিক্ষকদের মধ্যে সে টাকা ভাগ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বলেন আমরা সে টাকা পাইনি কোথায় খরচ হয়েছে সেটাও জানিনা।

এই বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠছে প্রস্তাবিত নতুন ভবনের টাকা বা মালামাল সঠিক গন্তব্যে পৌঁছবে তো? নাকি আগের মতই কাজির গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নাই পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে? এমত অবস্থায় দ্রুত ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্ত করে নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে নতুন ভবনের কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য ২০১৮ সালের ২১ মার্চ মঙ্গলবার আব্দুর রহমান কে সভাপতি করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস রুদ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ সদস্য বিশিষ্ট ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন দেন, কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন আব্দুল হালিম, আসাদুজ্জামান, লুৎফর রহমান, পারভিনা সুলতানা, ব্রজেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, জাহিদুল ইসলাম , দীপ্তি সরকার ও ইব্রাহিম বিশ্বাস।

আরো সংবাদ