আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - দুপুর ১২:৫৫

লাশের পাশেই রাতভর ঘুমিয়ে কাটান মিশু

শুক্রবার রাতে স্বামী-স্ত্রী তুমুল ঝগড়া হয়। মারধর করা হয় হাসনা হেনা ঝিলিককে। রাতে তাদের ৯ মাসের শিশুসন্তানকে তার দাদি সাঈদা আলমের কাছে রাখা হয়। সকালে মাকে পাশে না পেয়ে কান্নাকাটি করে শিশুটি। এ সময় এক গৃহকর্মী নারী শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের কক্ষে নিয়ে যান। তখন তিনি একই খাটে শিশুটির বাবা-মাকে শুয়ে থাকতে দেখে ডাকাডাকি করেন। একপর্যায়ে ঝিলিকের শরীরে হাত দিয়ে দেখেন শরীর ঠান্ডা এবং শক্ত হয়ে আছে। নড়াচড়া করছে না। নাকে-মুখে হাত দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ পান। পাশেই শুয়ে ছিলেন ঝিলিকের স্বামী সাকিব আলম মিশু। গৃহকর্মী ও বাসার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, রাতে ঝিলিককে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যার পর তার পাশেই রাত কাটিয়েছেন মিশু। তিনি ধনাঢ্য ব্যবসায়ীপুত্র হওয়ায় তার বাবা-মা, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী কখনোই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ঝিলিককে মেনে নিতে পারেননি। তারা বলতেন, তাদের ‘স্ট্যাটাসে’র সঙ্গে তাকে মানায় না। ঝিলিককে প্রায়ই মারধর করা হতো।

মিশুদের বাসা গুলশান ২ নম্বরের ৩৬ নম্বর সড়কের ২২/সিতে। এ-২ ফ্ল্যাটে তাদের বসবাস। এটি তাদের নিজের ফ্ল্যাট। তার বাবা-মা, ছোট ভাই ও তার স্ত্রীর বসবাস সেখানে। ওই বাসা থেকেই শনিবার সকালে জিপ গাড়ির পেছনের ছিটে বসিয়ে গাড়ি চালিয়ে হাতিরঝিলের দিকে যান মিশু। পরে দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর হত্যার ঘটনা ফাঁস হয়। চিকিৎসক জানান, ঝিলিকের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায় নয়। তাকে অনেক আগেই হত্যা করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে মিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, হত্যার ঘটনায় শনিবার রাতে ঝিলিকের মা তাহমিনা হোসেন আসমা বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলায় মিশু ও তার মা সাঈদা আলম, বাবা জাহাঙ্গীর আলম, ছোট ভাই ফাহিম আলম ও তার স্ত্রী টুকটুকি আলমকে আসামি করা হয়। মিশু ও তার মা-বাবাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এজাহারে বলা হয়েছে, বিয়ের পর থেকে ঝিলিককে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করত।

গতকাল রোববার মিশুসহ তিনজনকেই আদালতে পাঠানো হয়। মিশুকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয় আদালতে। শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। তার বাবা-মাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। অপর দুই আসামি ফাহিম ও তার স্ত্রী বাসায় অবস্থান করছেন। তারা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এ কারণে তাদের এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে তাদের করোনা পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছিল।

তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিশু বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাতেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বাধে। ওই রাতে ঝিলিক ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছিল। রাতেই তিনি গাড়িতে করে ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে নিয়ে যান স্ত্রীকে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে বাসায় আনা হয়। অবশ্য পুলিশ তার বক্তব্য যাচাই-বাছাই করছে। মিশু নিয়মিত মদপান ও ইয়াবা সেবন করতেন। এ ছাড়া নেশাজাতীয় প্যাথিডিন ইনজেকশন পুশ করতেন শরীরে।

গুলশান থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, মৃতদেহের নাকের ওপরে কালো জখম ছিল, চোখ-মুখ অর্ধফোলা, ঠেহ্নাঁট সামান্য কালচে এবং গলায় কালো লালচে দাগ রয়েছে। এ ছাড়া দুই হাতের বিভিন্ন স্থানে হালকা লালচে দাগ এবং বাম পায়ের গোড়ালির ওপরে কালো জখম রয়েছে।

ঝিলিকের খালু জামাল উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ঝিলিকের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে নেওয়া হয় মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাসায়। সেখানে তার মা ও ভাই ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। বিকেলে মোহাম্মদপুর কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

ঝিলিকের বাবা আনোয়ার হোসেন খান একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। নিন্ম-মধ্যবিত্ত পরিবার। ২০১৮ সালে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে ধনাঢ্য ব্যবসায়ীপুত্র মিশুর সঙ্গে ঝিলিকের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়েতে মত ছিল না মিশুর বাবা-মায়ের। বিয়ের কয়েক মাস না যেতেই তার ওপর নেমে আসে শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর ও তার স্ত্রীর নির্যাতন। বাসা থেকে তাকে বের করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে কয়েকবার।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত