আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। সেই আগুনের উত্তাপ পৌঁছে গেছে গুলশানে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের বাড়ি পর্যন্ত। পরশু রাতে এক ফেসবুক লাইভে সাকিবের করা বিসিবির সমালোচনার পর করণীয় ঠিক করতে কাল সন্ধ্যায় সেখানেই সভায় বসেছিলেন বোর্ডের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
সভার পর জাতীয় দলের সাবেক দুই অধিনায়ক এবং বিসিবি পরিচালক আকরাম খান ও নাঈমুর রহমান অবশ্য বলেছেন বাংলাদেশ দলের চলমান নিউজিল্যান্ড সফর ও বোর্ডের আরও কিছু বিষয় নিয়ে তাঁদের সভাটা পূর্বনির্ধারিতই ছিল। কিন্তু ঘটনাক্রমে সেখানে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে সাকিবের ফেসবুক লাইভ। অবশ্য দুজনই বলেছেন সাকিবের আলোচিত লাইভ অনুষ্ঠানটি তাঁরা তখন পর্যন্ত দেখেননি।
সাকিবের লাইভ না দেখলেও সংবাদমাধ্যমে এ–সংক্রান্ত খবরাখবর পড়ে এবং দেখে তাঁর ব্যাপারে কঠোর মনোভাবই প্রদর্শন করেছেন আকরাম ও নাঈমুর। সাকিব লাইভে বলেছেন, আইপিএল খেলতে চেয়ে তিনি যে চিঠিটি বিসিবিকে দিয়েছিলেন, সেখানে টেস্ট খেলতে চান না, এমন কিছু বলেননি। আকরাম খান হয়তো তাঁর চিঠিটি ঠিকভাবে পড়েনইনি। সভার পর এ ব্যাপারে আকরামের বক্তব্যে ক্ষোভটা স্পষ্ট, ‘আমরা তার চিঠি পড়ে ভুল বুঝতে পারি। সে হয়তো টেস্ট খেলতে চায়। আগ্রহ থাকলে অবশ্যই সে টেস্ট খেলবে। সে ক্ষেত্রে তাকে দেওয়া আইপিএলের অনাপত্তিপত্রটি আমরা পুনর্বিবেচনা করব।’ তবে পরে আবার তিনি বলেছেন, ‘ও (সাকিব) যে সময়ের জন্য ছুটি চেয়েছে, সে সময় শ্রীলঙ্কায় আমাদের দুটি টেস্টই খেলতে যাওয়ার কথা। ওয়ানডে বা টি–টোয়েন্টি নয়। সাকিব তো ওই সিরিজটা না খেলেই আইপিএল খেলতে চেয়েছে।’
তবে জানা গেছে, সাকিব গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিসিবিকে দেওয়া আইপিএলের অনাপত্তিপত্রের আবেদনে ছুটির জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করেননি। কিন্তু পরদিন বিসিবি তাঁকে আইপিএল খেলার যে অনাপত্তিপত্র দেয়, তাতে ছুটির সময় উল্লেখ করা হয় ১ এপ্রিল থেকে ১৮ মে পর্যন্ত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট দুটি ওই সময়েই।
সাকিবের আইপিএলের অনাপত্তিপত্র পুনর্বিবেচনা এবং চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার হয়েও প্রকাশ্যে বিসিবির সমালোচনা করায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দু–এক দিনের মধ্যে আবারও সভায় বসবে বিসিবি।
জাতীয় দলের সরবরাহ সারিতে ভালো ক্রিকেটারের অভাবের কারণে সাকিব বিসিবির হাই পারফরম্যান্স বিভাগেরও সমালোচনা করেন। এর জবাবে হাই পারফরম্যান্স প্রধান নাঈমুর বলেছেন, ‘এটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত। চার–পাঁচ বছর আগে হাই পারফরম্যান্স কোথায় ছিল আর এখন কোথায়, সেটা দেখা উচিত। হাই পারফরম্যান্স যখন ভালো করছে, তখন এ রকম বক্তব্য বিস্ময়কর।’
এক ঘণ্টার চেয়ে বেশি সময় ধরে চলা লাইভে সাকিব বলেছেন, তিনি টেস্ট খেলতে চান না, কথাটা ঠিক নয়। এ বছরের অক্টোবর–নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিজের প্রস্তুতির জন্যই তিনি চেয়েছিলেন আগামী এপ্রিল–মে মাসের আইপিএলে খেলতে।
সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই ওই সময়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে খেলা হবে না সাকিবের। টেস্ট দুটি না খেলার ব্যাপারেও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি, ‘ম্যাচগুলো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। আমাদের আছেই এই দুটি ম্যাচ। আমরা আছি পয়েন্ট তালিকার তলানিতে। এমন নয় যে এই দুটি ম্যাচ জিতলে আমরা ফাইনাল খেলব।’
তবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে ধন্যবাদ দিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘উনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন (তাঁকে ছুটি দিয়ে)। খেলোয়াড়দের এই স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।’