২০৪১ সাল নাগাদ কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের সমান করার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে অভিবাসী নারীসহ সব খাতে তাদের চাকুরি রক্ষার আহ্বান রেখেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে উচ্চ পর্যায়ের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এই আহ্বান জানান তিনি। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম বার্ষিক অধিবেশনের অংশে ফোর্থ ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন উইমেনের ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই বৈঠক হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে নারীর ক্ষমতায়ন, অগ্রগতি ও সমতা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অঙ্গীকার নবায়ন ও প্রচেষ্টা জোরদারেরও আহ্বান জানান।নারীর অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তাদের চাকুরি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকসহ বিশ্ব সরবরাহ চেইনসহ অন্যান্য বৃহৎ কর্মক্ষেত্রে নারী কর্মীদের অবশ্যই রক্ষা করতে হবে যেন তারা আবারও প্রান্তিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”
অপর দুটি বিষয় তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই বলেন, প্রতিটি মেয়ের কাছ থেকে বিশ্ব উপকৃত হতে পারে যার সম্ভাবনা ইতোমধ্যে উপলব্ধি করা গেছে, প্রতিটি নারী যাদের মেধা অবিকশিত এবং কেবল শিক্ষার মাধ্যমেই এর বিকাশ ঘটানো সম্ভব।
দ্বিতীয়ত তিনি বলেন, আয় এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমেই ক্ষমতায়ন সৃষ্টি হয়। তাই আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে নারীদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
ফোর্থ ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন উইমেনের ২৫তম বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “২৫তম এই বার্ষিকীতে আমি ২০৪১ সাল নাগাদ কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০-৫০ এ উন্নীত করার অঙ্গীকার করছি।”
কোভিড-১৯ মহামারী নারীদের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহামারীর এই সময়ে নারীরা বৈষম্য এবং বেশি পারিবারিক সহিংতার শিকার হচ্ছে।“যার ফলে নারীর ক্ষমতায়নে আমাদের কষ্টার্জিত অর্জন হুমকির মুখে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে ১৯৯৫ সালের বেইজিং ডিক্লারেশন অ্যান্ড প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন একটি বড় ধরনের রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এটি নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপকভাবে বদলে দিয়েছে এবং ইতিবাচক উন্নয়নের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।“তখন থেকে প্রায় সব দেশ নারী ও মেয়েদের সুরক্ষায় আইনি কাঠামো তৈরি করে। ২০৩০ এজেন্ডাও নিশ্চিতভাবে সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নারীকে স্বীকৃতি দিয়েছে “আমরা যেহেতু ‘পদক্ষেপের দশকে’ প্রবেশ করেছি তাই আমাদেরকে অবশ্যই প্রতিশ্রুতি নবায়ন করতে হবে এবং নারী-পুরুষের সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে।”
জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ে নারী প্রতিনিধিদের অগ্রাধিকার দেওয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা সকল পর্যায়েই এমনটা দেখতে চাই।”নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের উন্নয়ন এজেন্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে নারীদের বসিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীর প্রয়োজন পূরণের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এই উন্নয়নে সমাজের সকল স্তরের সব ধরনের মানুষকে অন্তর্ভুক্তির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।“এজন্যই আমরা শিক্ষার পাশাপাশি নারীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর জোর দিয়েছি। আমরা নারীদের আমাদের উন্নয়নের সক্রিয় কর্মী হিসেবে বিবেচনা করি।” “নারীরা এখন উচ্চ আদালতের বিচারক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং আরও অনেক কিছু হয়ে উঠছেন। জেন্ডার বাজেটিং, মাইক্রো ফাইন্যান্স এবং অনুরূপ উদ্যোগগুলো নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছে।”প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর উন্নয়নে সরকারের বিনিয়োগের কারণে নারী সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুফল বয়ে আনছে।
“আজ ২ কোটি নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিত রয়েছেন এবং ৩৫ লাখেরও বেশি নারী তৈরি পোশাক খাতে কাজ করছেন, যা আমাদের বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্র।”
এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার নারী সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করেছেন বলেও জানান তিনি।
নারীর ক্ষমতায়নে সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী অনেক প্রশংসা অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের নারীরা বাধা ভাঙছেন এবং পেশায় সফল হচ্ছেন, যা আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম কখন কল্পনাও করতে পারত না।”
তিনি বলেন, “ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স অনুসারে আমরা নারীদের সামগ্রিক ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছি, ১৪৯টি দেশের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পঞ্চম এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সপ্তম স্থানে। এরপরেও আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে।”