খানজাহান আলী 24/7 নিউজঃ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে আগামীকাল শুক্রবার ঢাকা আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যদিও মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতা করে নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠন।
তবে এসবে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না সরকার। বরং রাষ্ট্রীয় এই মহাগুরুত্বপূর্ণ অতিথির সফরকে নির্বিঘ্ন করতে গ্রহণ করা হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। তৈরি হয়েছে মোদির সফরের সম্ভাব্য সূচিও।
সূত্র জানায়, নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হবে পুরো ঢাকা শহর ও তার সম্ভাব্য গন্তব্য স্থানগুলো। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাটা মূল উদ্দেশ্য হলেও মোদির সফরে ট্রানজিট, কানেক্টিভিটি, বাণিজ্য, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনাসহ দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় আলোচনা-সমঝোতার মাধ্যমে বিদ্যমান বন্ধুত্বের নব দিগন্তের সূচনা হবে বলে ঢাকা আশা করে।
কোভিডের কারণে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক জরুরি পরিস্থিতি, কাঁচামাল আমাদানি, স্থলবন্দর ব্যবস্থাপনা, পানি, নদীসহ সব বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনা হবে। একটি কম্প্রিহেনসিভ পার্টনারশিপের প্রস্তাবও আসতে পারে। বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে সই হতে পারে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)। তার মধ্যে ইতোমধ্যে তিনটি চূড়ান্ত হয়েছে।
এদিকে মোদির এই সফর নিয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, গত বছর কভিড মহামারি শুরুর পর নরেন্দ্র মোদির এটিই প্রথম বিদেশ সফর। এ সফরের মধ্য দিয়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব প্রতিফলিত হবে।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে বেশ কিছু সমঝোতা হবে। তবে এই সফরে সব কিছুর ঊর্ধ্বে থাকবে মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন।
এক প্রশ্নের জবাবে শ্রিংলা বলেন, সম্ভাব্য চুক্তি ও সমঝোতাগুলোও গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু সফরের মূল বিষয় হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর এবং মুজিববর্ষ। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ভারতীয়রাও বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে। একটি দেশ স্বাধীন করতে প্রতিবেশী দুই দেশের একসঙ্গে হয়ে রক্তদান ও আত্মত্যাগ বিরল।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এ সফরে তিনি আগামীকাল ঢাকায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বক্তব্য দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদির বৈঠক হবে। মোদি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরকালে ১৪ দল, সংসদে বিরোধী দল, মুক্তিযোদ্ধা, ‘কমিউনিটি লিডার’ ও ‘ইয়ুথ আইকন’দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মিলে তিনি বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল জাদুঘর উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সে যাবেন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জের ওরাকান্দিতে মোদি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব শ্রিংলা বঙ্গবন্ধুকে ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’ দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধু দুই দেশের সম্পর্ক ও জোরালো অংশীদারির ভিত্তি গড়েছিলেন। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে নিতে দুই দেশেরই জোরালো আগ্রহ আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সময়ে এ সম্পর্ক সত্যিকার অর্থেই ‘সোনালি অধ্যায়ে’ পরিণত হয়েছে।
শ্রিংলা বলেন, এ যাবৎ ভারতের তৈরি করোনার টিকা সবচেয়ে বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বাংলাদেশের করোনা টিকার চাহিদা মেটাতে ভারত যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।