নিজস্ব প্রতিবেদক:
পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে দুই চোখ হারাতে বসা কলেজছাত্র সিদ্দিকুর রহমান চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ের পথে রওনা হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্র সবার দোয়া চান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছি। আমি যেন চোখে দৃষ্টি ফিরে পাই। আমার প্রথম আর্জি, যেন দেশে এসে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পারি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সিদ্দিকুরের চিকিৎসার খরচসহ সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় তাকে নেওয়া হচ্ছে চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে।
সিদ্দিকুরের সঙ্গে চেন্নাই যাচ্ছেন তার ভাই নওয়াব আলী ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুল আহসান মেনন।
বেলা ১টায় শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে ডা. মেনন বলেন, “আজ রাতে থেকে কাল ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করব। শুক্রবার রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে ডাক্তারের অ্যাপয়েনমেন্ট নেওয়া আছে।”
পরীক্ষার সময়সূচির দাবিতে গত ২০ জুলাই শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় লাটিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। তখন সিদ্দিকুরের চোখে টিয়ার শেলের আঘাত লাগে।
ডা. মেনন বলেন, “সিদ্দিকুরের একটি চোখ, যেটা একেবারে ড্যামেজ হয়ে গেছে, সেটার বিষয়ে আমরা আশা করি না। আরেকটা চোখ যেটাতে একটু আলো পায়, সেটার বিষয়েও এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। সার্জারি, টেস্টের পর বুঝতে পারব কতোটা আলো আসে। ঠিক এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।”
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু সহায়তা করা যায় তা তারা করবেন।সিদ্দিকুরের চিকিৎসায় কতটা করা সম্ভব, তা দেখবেন।
নিম্নবিত্ত পরিবারের এই কলেজছাত্রের চিকিৎসার দায়িত্ব যেন সরকার নেয়, সেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন তার সহপাঠীরা। একই দাবি জানিয়ে সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্র জোট।
ওইদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিদ্দিকুরের চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করবে জানিয়ে চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর কথা বলা হয়।
এরপর মঙ্গলবার সিদ্দিকুরকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে তাকে চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে নেওয়ার দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে ছেলেকে বিদায় দেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন সিদ্দিকুরের মা সোলেমা খাতুন; ছেলে যেন দৃষ্টি ফিরে পায়, সেই আর্জিই সৃষ্টিকর্তার কাছে জানাচ্ছিলেন তিনি।
সোলেমা বলেন, “আল্লাহ আমার ছেলের চোখ ভিক্ষা দাও। আমার ছেলের চোখ ফিরায়া দাও।”
সিদ্দিকুরের ভাই নওয়াব আলী সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ভাইকে নিয়ে এখন দেশের বাইরে যাচ্ছি। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাচ্ছি, আমার ভাই যেন আবার দেখতে পারে। এটাই এখন একমাত্র চাওয়া।”
চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সিদ্দিকুর ও তার ভাই নওয়াব আলী।