আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ১:২৮

করোনা: ভারতে ‘ডায়াবেটিস সুনামি’র আশঙ্কা

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে ভারতে ভয়াবহভাবে ডায়াবেটিস রোগী বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা মহামারির পর ভারতে দেখা দিতে পারে ‘ডায়াবেটিস সুনামি’। অনলাইন বিবিসিতে এ খবর দিয়ে সাংবাদিক সৌতিক বিশ্বাস জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীকে ফুসফুসের প্রদাহ কমানোর জন্য দেয়া হয় স্টেরয়েড। ফুসফুসের কিছু ক্ষতি বন্ধ করতেও সাহায্য করে এটা। কিন্তু একই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ডায়াবেটিস যাদের আছে, তারা এবং যাদের ডায়াবেটিস নেই- এমন উভয় শ্রেণির কোভিড-১৯ রোগীদের শরীরে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে আগে ডায়াবেটিস ছিল না, এমন মানুষ করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার অনেক পরও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ ব্যবহার করছেন। বিশ্বে ডায়াবেটিসের হিসেবে ভারতে প্রতি ৬ জন মানুষের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

প্রায় ৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এখানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এক্ষেত্রে চীনের পরে দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত। চীনে ডায়াবেটিস নিয়ে জীবন যাপন করছেন এক ১১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন, বহু রোগী আছেন, তাদের ডায়াবেটিসের পরীক্ষা হয়নি। ফলে তাদের শরীরে ক্রমেই এই রোগের বিস্তার ঘটেছে। উল্লেখ্য, অগ্নাশয় যখন পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না অথবা শরীরে উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে অক্ষম হয় দেহ- তখনই ডায়াবেটিস দেখা দেয়। এর ফলে শরীরে গ্লুকোজের ঘনত্ব বাড়তে থাকে। গ্লুকোজও এক ধরনের চিনি। রক্তে এর আধিক্য হওয়ার ফলে স্বাস্থ্যগত মারাত্মক সব ঝুঁকি দেখা দেয়। এর মধ্যে আক্রান্ত হতে পারে কিডনি, চোখ এবং হার্ট। এ ছাড়া শরীর মোটা হয়ে যেতে থাকে। রক্তের চাপ বাড়তে থাকে। হার্ট এবং ফুসফুসের নানা রোগ দেখা দেয়।
করোনায় যেসব মানুষ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হন তাদের মধ্যে এই ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি থেকে যায়। চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে যে বিপুল পরিমাণ রোগী সুস্থ হয়েছেন, তাদের সামনে ঝুঁকি আছে। তাদেরকে পরীক্ষা করলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত দেখা যাবে অনেককে। উল্লেখ্য, ভারতে প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পরেই এত বেশি সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ভারতে। বিবিসির ওই রিপোর্টে একজন বিপুল শাহের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তিনি মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে সিসিইউতে কাটিয়েছেন ১১ দিন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে কোনোদিনই তার ডায়াবেটিস ছিল না। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাকে স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। করোনা থেকে প্রায় এক বছর আগে সুস্থ হয়েছেন ৪৭ বছর বয়সী বিপুল শাহ। তবে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে তাকে এখনও ওষুধ খেতে হয়। বিপুল শাহ বলেন, আমার মতো বহু মানুষকে জানি। তারা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার পর ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে মুম্বইয়ের ডায়াবেটিস সংক্রান্ত একটি হাসপাতালের চিকিৎসক ড. রাহুল বক্সি বলেছেন, করোনা মহামারি শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভারতে ডায়াবেটিসের সুনামি নামাতে পারে কোভিড-১৯। এ নিয়ে উদ্বেগ আছে। তিনি আরো বলেছেন, তার শতকরা ৮ থেকে ১০ ভাগ রোগীর ডায়াবেটিসের কোনো হিস্ট্রি ছিল না। কিন্তু তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে রক্তে উচ্চ মাত্রায় চিনি পাওয়া গেছে। তাদেরকে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রাহুল আরো বলেন, অনেক রোগী আছেন। তারা ডায়াবেটিসের একেবারে বর্ডারলাইনে অবস্থান করছেন। অন্যরা করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর অব্যাহতভাবে চিকিৎসা নিয়ে কোনোমতে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছেন।
করোনার সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক নিয়ে বিশ্বজুড়ে চিকিৎসকরা বিতর্ক করছেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে যেসব রোগীর ডায়াবেটিস ছিল না, করোনায় তাদের দেহে ডায়াবেটিস হতে পারে কিনা- তা নিয়েই তাদের বিতর্ক। তারা বলছেন, এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা স্টেরয়েডের কারণে। আবার ভাইরাস নিজেও অগ্নাশয়ের কোষকে আক্রান্ত করতে পারে। তবে ভারতের চিকিৎসদের এক গবেষণা পিয়ার রিভিউ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যেসব মানুষ মিউকরমাইকোসিস থেকে সুস্থ হয়েছেন অথবা ভয়াবহ ব্লাক ফাঙ্গাস থেকে সুস্থ হয়েছেন- দৃশ্যত তার সঙ্গে এর যোগসূত্র আছে। এ পর্যন্ত ভারতে কমপক্ষে ৪৫ হাজার ব্লাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের রিপোর্ট করা হয়েছে। এই ফাঙ্গাস নাক, চোখ, ব্রেনের কিছু অংশ আক্রান্ত করে, ক্ষতি করে। করোনা ভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার ১২-১৮ দিন পরে সাধারণত এই সংক্রমণ দেখা দেয়।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত