আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ১:৩৫

কিছু দেশ পুরো দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে, সেই যুগ শেষ: চীন

কিছু দেশের একটি ‘ছোট’ গোষ্ঠী পুরো দুনিয়ার ভাগ্য নির্ধারণ করবে, সেই যুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর নেতাদের প্রতি এমন সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে চীন।

যুক্তরাজ্যে চলমান শীর্ষ সম্মেলনে যখন জি-৭ গোষ্ঠীর নেতারা চীনের মোকাবিলা করতে একটি অভিন্ন অবস্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, ঠিক সেই সময়ে এমন সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করলেন লন্ডনে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র।

চীনের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাব মোকাবিলা করতে জি-৭ গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতারা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের এক পরিকল্পনার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, চীনের পুনরুত্থান ঠেকাতে হলে পশ্চিমা শক্তিগুলোকে এখনই সক্রিয় হতে হবে।

রবিবার জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী ঘোষণা প্রকাশের কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এতে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আরও বেশি অর্থনৈতিক সহায়তা এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে আরও অর্থায়নের কথা থাকবে। একে বলা হচ্ছে চীনা কর্মসূচির বিকল্প।

জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড’ নামে এমন এক পরিকল্পনার সূচনা করছে; যা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচির চাইতে উচ্চতর মানের হবে।

দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বিনিয়োগ কর্মসূচিতে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। এর আওতায় নানা রকম অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, চীনের এই কর্মসূচি দরিদ্রতর দেশগুলোর ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে যা তারা শোধ করতে পারছে না। এখন ক্ষমতাধর পশ্চিমা দেশগুলোর জোট জি-৭ এরই পাল্টা এক কর্মসূচি হাজির করতে চাইছে।

লন্ডনে চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, একটা সময় ছিল যখন কয়েকটি দেশের ছোট্ট একটি গোষ্ঠী বৈশ্বিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো, কিন্তু সেই যুগ শেষ হয়ে গেছে। আমরা সব সময়ই বিশ্বাস করি, ছোট বা বড়, শক্তিধর বা দুর্বল, ধনী বা দরিদ্র যাই হোক- সব দেশই সমান। আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো সব দেশের সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমেই পরিচালিত হওয়া উচিত।

শনিবার এক বিবৃতিতে জি-সেভেন দেশগুলো বলেছে, তাদের অবকাঠামো পরিকল্পনা হবে ‘মূল্যবোধসম্পন্ন, উচ্চমানের ও স্বচ্ছ’ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে।

কীভাবে এর অর্থায়ন হবে তা এখনও অস্পষ্ট রয়ে গেছে। বিবিসির রাজনৈতিক সংবাদদাতা রব ওয়াটসন জানান, প্রেসিডেন্ট বাইডেন করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী বিশ্বকে গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম হিসেবে চিত্রিত করতে চাইছেন। তবে চীনকে অংশীদার, প্রতিদ্বন্দ্বী নাকি একটি নিরাপত্তা হুমকি- ঠিক কীভাবে দেখা হবে, তা নিয়ে জি-৭ গোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এখনও পর্যন্ত কোনও ঐকমত্য নেই।

বিশ্বে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামো তৈরিতে ব্যাপক পরিমাণ বিনিয়োগের যে কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলছেন; তার ব্যাপারে গতকালই জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, জি-৭ এই তহবিল ছাড় করার মতো অবস্থায় আসেনি।

কয়েকদিন আগে চীনকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ২৫ হাজার কোটি ডলার খরচ করবে; এমন এক পরিকল্পনার কথা জানার পর বেইজিং অভিযোগ করে যে ওয়াশিংটন সন্দেহবাতিকগ্রস্ত বিভ্রমে ভুগছে।

মার্কিন সিনেটে অনুমোদিত এই বিলটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং সেমিকণ্ডাকটরের মতো ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য অর্থসংস্থান করবে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বেইজিংকে একটি হুমকি হিসেবে দেখা বন্ধ করা।

চীন ইতোমধ্যেই নিজস্ব এমন কিছু প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি করেছে যা তাদের মতে দেশটিকে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সুবিধা করে দেবে। সূত্র: বিবিসি।

আরো সংবাদ