কোথায় পড়বে চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। এ সপ্তাহেই এটি পৃথিবীতে আছড়ে পড়বে। এটি কোথায় আছড়ে পড়বে তা নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় না থাকাতে মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, ঠিক কখন এবং পৃথিবীর কোন অংশের দিকে এটি আছড়ে পড়তে যাচ্ছে তাও।
বিবিসির খবরে জানানো হয়েছে, গত ২৯শে এপ্রিল চীনের ওয়েনচ্যাং স্পেস স্টেশন থেকে লং মার্চ ফাইভবি রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। মহাকাশে এই রকেটের ধবংসাবশেষ এখন পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি ক্রমাগত পৃথিবীর দিকে নেমে আসছে। মধ্যাকর্ষণের কারণে এটি এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে এসে পৃথিবীতে আঘাত হানবে।তবে বায়ুমণ্ডল স্থির না থাকায় হিসেব করে বের করা যাচ্ছে না ঠিক কোন অংশে এটি পড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা ধ্বংসাবশেষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে এখনই এটিকে মিসাইল ছুঁড়ে ধ্বংস করা হবে কিনা তার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন বলেন, আমরা আশা করছি এটি এমন জায়গায় ধসে পড়বে যেখানে কারো ক্ষতি হবে না। আশা করি সমুদ্র বা এমন জনমানবহীন কোথাও পড়বে এটি। চীনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এ ধরণের কোনো পরিকল্পনা এবং অভিযান পরিচালনার সময় অনেক কিছু মাথায় রাখা জরুরি ছিল।
এদিকে, আর্থ অবজারভেটরি সিঙ্গাপুরের জেসন স্কট হেরিন জানান, মধ্যাকর্ষণ টানের ফলে এই ধ্বংসাবশেষ নীচের দিকে আরো ঘণ বায়ুমণ্ডলের দিকে নামতে থাকবে। এর ফলে মধ্যাকর্ষণ টান এবং নীচের দিকে নেমে আসার গতিবেগও বাড়বে। একবার এই প্রক্রিয়া শুরু হলে, বস্তুটি একটি একটি নির্দিষ্ট দিকে নীচের দিকে ধেয়ে আসতে থাকবে। তিনি উল্লেখ করেন, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুমণ্ডল ক্রমেই ঘন হতে থাকায় রকেটের ধ্বংসাবশেষের বেশিরভাগ আগুনে পুড়ে যাবে। যে অংশগুলো পুড়বে না সেগুলোই পৃথিবীতে ভেঙে পড়বে। এটি কোথায় এসে পড়বে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বা সঠিক পূর্বাভাসও দেয়া যাবে না।
এদিকে হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রো ফিজিক্সের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জনাথন ম্যাকডোয়েল বলেন, মার্কিন বা ইউরোপীয় রকেটগুলো বিশেষভাবে নকশা করা হয়। ফলে এগুলো কক্ষপথে ছিটকে না পড়ে। আবার একটি রকেটের ধ্বংসাবশেষ নিয়ন্ত্রিতভাবে পৃথিবীতে ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে রকেটটির মধ্যে সেই নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম থাকতে হবে। চীনের রকেটে এটি নেই। থাকলে রকেটের ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রের মাঝখানে এবং জনমানব থেকে দূরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে যে ভেঙে পড়বে সেটা নিশ্চিত করা যেতো। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সবথেকে দূরের দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলটি এসব ধ্বংসাবশেষ ফেলার ক্ষেত্রে নিরাপদ। কারণ এই জায়গাটিকে মহাসাগরের দুর্গম মেরু বলা হয়।