আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - দুপুর ২:৪৪

বঙ্গবন্ধু জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে একশতটি কুমির পাচ্ছে নতুন ঠিকানা

সুন্দরবন থেকে ফিরে – মাসুদ রানা: বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্র বনের করমজলে লালিত ১০০শটি বন্যপ্রানীকে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবমুক্ত করবে বন বিভাগ। বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে এ বন্য প্রানীগুরো তাদের নিজ ঠিকানায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় ও বন বিভাগ।

বাংলাদেশ অংশে ৬ হাজার ১১৭ বর্গ কিলোমিটারের সুন্দরবনে জল ভাগের পরিমান ১ হাজার ৮শ’ ৭৪ বর্গ কিলোমিটার। যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১.১৫ ভাগ। এই বিশাল জল ভাগের ছোট-বড় ৪শ’ ৫০টি নদী ও খাল রয়েছে।

বিশাল আয়তনের এই সুন্দরবনে রয়েছে সুন্দরী, গেওয়া, গরান,পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বনপ্রাণি। নদ-নদীতে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় তালিকায় থাকা ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন কুমির ও ২১০ প্রজাতির মাছ।

সুন্দরবনের নোনা পানির নদী ও খালে তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও গঙ্গোত্রীয় কুমির বা ঘডিয়াল। ইতি মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘিড়িয়ালের বিলুপ্তি ঘটেছে। তাই বনের সৌন্দার্য ধরে রাখতে এবং নোনা পানিক কুমির বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা ও বংশবিস্তার করতে ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারি এ কুমির প্রজননকেন্দ্র।

সরকারের প্রচেষ্টায় কুমিরের বংশবিস্তারের লক্ষে বর্তমানে কেন্দ্রে পিলপিল ও জুলিয়েট নামে মিঠা পানির দুটি নারী কুমির ও রোমিও নামের নোনা পানির একটি পুরুষ কুমিরে প্রজননের মাধ্যমে তাদের দেয়া ডিম বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশনে বাচ্চা ফুটিয়ে লালন-পালন করে বনের বিণিœ খালে অবমুক্ত করা হয়।

মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ১০০টি বন্যপ্রানী সুন্দরবনে অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় বন বিভাগ। ১৫ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে খুলনা-২০টি, সাতক্ষিরা-২০টি, শরনখোলা-২০টি ও চাদঁপাই রেঞ্জ-৩০টি বাচ্চা কুমির করমজলের খালসহ সুন্দরবনের অন্যান্য নদী ও খালের গহিনে মোট ৯০টি কুমির অবমুক্ত করা হবে।

এছাড়া পরিবেশ বান্ধব বিলুপ্ত প্রায় বিরল প্রজাতির ১০টি বাটাগুড় বাস্কা কচ্চপও অবমুক্ত করা হবে। এসময় পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরীসহ বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা এসময় উপস্থিত থেকে বন্যপ্রানীগুলো অবমুক্ত করার কথা রয়েছে।

করমজল বন্য প্রানী প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞ হাওলাদার আজাদ কবির জানান, বর্তমানে কেন্দ্রে পিলপিল ও জুলিয়েট নামে মিঠা পানির দুটি নারী কুমির এবং রোমিও নামের নোনা পানির একটি পুরুষ কুমির রয়েছে। এ পর্যন্ত ওই দুই নারী ও পুরুষ কুমির দম্পত্তির ওপর নির্ভর করেই চলছে এ প্রজনন কন্দ্রেটি। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও গঙ্গোত্রীয় কুমির বা ঘডিয়াল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘডিয়ালের বিলুপ্তি ঘটেছে।

এখন শুধু লবণ পানির কুমিরের অস্তিত্বই আছে। এরা সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এই কেন্দ্র থেকে ডুলা হাজারা সাফারি পার্ক, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পটুয়াখালী বন বিভাগ ও সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে শতাধিক কুমির অবমুক্ত করার পর বর্তমান কেন্দ্রে কুেিরর সংখ্যা ৯৪টি, আর একই জায়গায় ২০১০ সালে গড়ে ওঠা বিলুপ্ত প্রায় বিরল প্রজাতির বাটাগুড় বাস্কা জাতিয় কচ্চপ রয়েছে ৪৩৫টি।

জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে প্রজনন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। আর সুন্দরবনের ৪শ ৫০টি নদী ও খালে ১৫০-২০০টি নোনা পানির কুমির রয়েছে।

কুমির অবমুক্ত করণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার,বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী, সিএফ মিহির কুমার দো, পশ্চিম সুন্দর বন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মহাসিন হোসেন, পুর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন, বন্য প্রানী ব্যাবস্থাপনা ও প্রকিতি সংরক্ষন বিভাগের ডিএফও নির্মল কুমার পালসহ বন বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও বনপ্রহরীরা।

আরো সংবাদ