সামরিক অভ্যুত্থানে আটক মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিকে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে বলে বিবিসির এক খবরে জানা গেছে। দেশটির পুলিশের নথিপত্রের সূত্র দিয়ে বিবিসি বলছে, সু চি ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রিমান্ডে।
একইসঙ্গে বুধবার দেশটির পুলিশ নির্বাচিত বেসামরিক নেতা অং সান সু চির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছে বলেও জানা গেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি আইন লঙ্ঘন এবং অবৈধ যোগাযোগ ডিভাইস ব্যবহার দুটি।
খবরে বলা হয়েছে, অং সান সু চি কোথায় আছেন, তা এখনও অস্পষ্ট। তবে জানা গেছে, তাকে রাজধানী নেপিদোর নে পি তাউতে তার বাসভবনেই রাখা হচ্ছে।
এছাড়া দেশটির সদ্য পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট কারাগারে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার নথিতে দেখা গেছে, কভিড-১৯ মহামারি চলাকালে সমাবেশ নিষেধাজ্ঞার বিধি লঙ্ঘন করেছেন তিনি।
সোমবার ভোরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে অং সান সু চি, উইন মিন্টসহ দলের সিনিয়র নেতাদের আটক করে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাবাহিনী। এরমধ্যে ক্ষমতা দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ এবং সেনাপ্রধান মিন অং লাইং।
থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে মিয়ানমারে। সেনাবাহিনীর পুরো কবজায় দেশটি। সামরিক অভিযান, জরুরি অবস্থা ও শীর্ষ নেতাদের আটকের ঘটনায় দেশটির জনগণের মনে ভর করেছে সেই পুরোনো আতঙ্ক। সামরিক খাঁচায় থাকার স্মৃতি আবার তাড়া করে ফিরছে তাদের। দিন কাটছে উৎকণ্ঠা আর সংশয় নিয়ে।
সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর নড়েচড়ে বসেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। শতাধিক এমপিসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়। এদিকে পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
গত ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি নিরঙ্কুশ জয় পায়। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেখানে ৩২২টি আসনই যথেষ্ট, সেখানে এনএলডি পেয়েছিল ৩৪৬টি আসন। সোমবার থেকে নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল।
এনএলডি নিরঙ্কশ জয় পেলেও সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল। তারা নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলে। যদিও ইউএসডিপি ৭১টি আসনে জয় পেয়েছে।
‘নির্বাচনে জালিয়াতি’র প্রতিক্রিয়ায়ই দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। অবশ্য এ আশঙ্কা বেশ কয়েকদিন আগে দেখা দিলেও মাঝখানে সেনাবাহিনী এসব উড়িয়ে দিয়ে বলেছিল, সেনাবাহিনী সংবিধানের সুরক্ষা দিয়ে আসছে; বাহিনীটি আইন অনুযায়ীই কাজ করবে। কিছু সংস্থা ও গণমাধ্যম তারা যা চায়, তাই ধরে নিয়েছে এবং লিখছে।
এর আগে ১৯৬২ সালে এক অভ্যুত্থানের পর দেশটি টানা ৪৯ বছর সামরিক বাহিনীর হাতে শাসিত হয়েছে। অর্থাৎ দেশটি মাঝখানে মাত্র ১০ বছর ছিল গণতন্ত্রের পথে। অবশ্য এ সময়েও সামরিক হস্তক্ষেপ যখন তখনই ছিল দেশটিতে।