ছাত্রলীগ করতে যেয়ে ছাত্রদল ও পুলিশের পিটুনিতে আমার তিনবার হাত ভেঙ্গেছিলো। বন্ধুরা যখন ক্লাসরুম বা পড়াশোনায় ব্যস্ত ছিল আমি তখন মধুর ক্যান্টিন আর ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াতাম ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’; ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ শ্লোগানে।
ওয়ান ইলেভেনে নিজের এবং পরিবারের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় ছিলাম। কত কত নির্ঘুম রাত …
জীবনের একটা পর্যায়ে এসে মনে হয়েছে রাজনীতি আমার জন্য না।
তবে একসময় ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম এটা নিয়ে আমি গর্ব করি।
ভর্তি পরীক্ষায় বেশ ভালো করেছিলাম। খুব অল্প পড়েই মোটামুটি ভালো নম্বর পেয়েছিলাম অনার্স মাস্টার্সে। আমার যে বন্ধুরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক, যুগ্ম জেলা জজ, ইউএনও, এডিশনাল এসপি, ডেপুটি ডিরেক্টর কারো চেয়ে একটুও কম মেধাবী ছিলাম না আমি।
ছাত্রলীগ না করে ঠিকমত পড়াশোনাটা করলে অথবা ছাত্রজীবনে অন্য কোন সংগঠন করলে আমিও কর্মজীবন শেষে বড় কিছুই হতাম।
আমার মত লাখো বাণী ইয়াসমিন হাসির ঘাম শ্রম আর আবেগ মিশে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গায়ে। পার্টি যদি ভুল পথে হাঁটে আমার ঘাম শ্রমের বিনিময়ে হলেও সমালোচনার দাবি আমি রাখি। ভালো থাকুক ভালোবাসার আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর ছিল একজন খন্দকার মোশতাক।
শেখ হাসিনার শয়ে শয়ে। খন্দকার মোশতাকদের ভিড়ে নিরাপদে থাকুক প্রিয় আপা।
কোভিড খাতে বরাদ্দ ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ২৫ লাখ টাকার কাজ পেয়েছিলো আমিন ভাইয়ের কোম্পানি। বড় চোরদের বাঁচাতে আমিন ভাইকে ফাঁসানো হলো। উনার নামে পুলিশ কেস হলো, দুদক মামলা করলো। অথচ হাজার কোটি টাকা যারা লোপাট করলো তাদের কিছুই হলো না। আমিন ভাইয়ের সংগঠনের নেতারাই উনার বিরূদ্ধে নিউজ করালেন, নিউজ শেয়ার করালেন আবার বুস্ট করে ভাইরালও করালেন!
যশোরের ডিসি তমিজ ভাইকে ছাত্রদলের ক্যাডার বানিয়ে দেওয়া হলো। উনার সময়ের এফ রহমান হলের ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট/ সেক্রেটারি কুমিল্লার এসপি নুরুল ভাই ও মাহফুজ মামা দুইজনই বললেন, তমিজ ভাই উনাদের সাথে ছাত্রলীগ করতেন। একটু খোঁজ নিলেই ব্যাকগ্রাউন্ড টা জানা যেত কিন্তু কেউ সেটা করলেন না। প্রশাসন ক্যাডারের গ্রুপিং এর কারণে ভালো পোস্টিং কেউ পেলেই নোংরামি শুরু হয়। আর এটা করে আমাদের লোকেরাই। বিএনপির নোমান সাহেবের পিএস একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন, এটা নিয়ে টুশব্দটাও কেউ করলো না। ডিসি কি এত বড় পদ? অথচ সরকারের কত গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে কত পোস্টেড বিএনপি জামাত বসে আছে সেটা নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই।
লক্ষ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা হলো। কয় টাকার কাজ সাবেক ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগ বা সহযোগী অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীরা পাবে?
নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি আর কাঁদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করেন। চোখ মেলে দেখেন, আপনারা কাবাডি খেলায় ব্যস্ত। আর অন্যরা সম্পদের পাহাড় গড়ছে। এবার আত্ম উপলব্ধির সময় এসেছে। আপনাদের দল ক্ষমতায় তারপরও আপনারা ক্ষমতাহীন। চাকরি ব্যবসা সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে অন্য কেউ। আর এর জন্য সবচেয়ে বড় দায়টা কিন্তু আপনাদেরই। দেরী হোক, যায়নি সময়। সবাই এক হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই টা শুরু করেন। এতে আপনারা বাঁচবেন, দল বাঁচবে, দেশও বাঁচবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আর যাই হোক মানুষের কথা ভাববে। এভাবে পুকুর চুরি করবে না। এটা আমার বিশ্বাস।
দলীয় নেতাকর্মীরা একে অন্যের কাপড় খোলার নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে। ছোট মুখে একটা বড় কথা বলি। খুউব সুপরিকল্পিতভাবে সবগুলো উইং কে দুর্বল বা ধ্বংস করা হচ্ছে। কালিমালেপন করা হচ্ছে। শুরুটা ছাত্রলীগ দিয়ে তারপর যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মূল দলের সম্মেলনে বিতর্কিতদের প্রমোশন অথবা পূনর্বাসন, যুবমহিলা লীগ। এরপর কে বা কোন উইং?
কাঁদা ছোড়াছুড়ি না করে একটু ভাবুন। কিসের মোহে ছুটছেন? কাকে ধরতে দৌড়াচ্ছেন? নাকি কেউ আড়াল থেকে আপনাদের একজনের পেছনে অন্যকে লেলিয়ে দিচ্ছে? ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হচ্ছেন। একে অন্যকে হারাতে গিয়ে দিনশেষে সবাই মিলে হারছেন!
মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, প্রশাসনের বড়কর্তা, মিডিয়া সর্বত্রই তার সরব উপস্থিতি। ধরা পড়ার পর জানা গেলো তিনি মীর কাশেম এবং নাজমুল হুদার ঘনিষ্ঠ। তার আওয়ামী রাজনীতির ক্যারিয়ার মাত্র বছর ছয়েকের। এর মধ্যেই তিনি এতকিছু বাগিয়ে নিলেন!
অথচ রাজপথে যারা রক্ত ঝরিয়েছে, জেল খেটেছে-গত দুই যুগ বা তারও বেশি সময় ধরে তাদের অধিকাংশই আজও নিজের একটা আইডেনটিটি তৈরি করতে পারেননি।
লাইসেন্স এবং নূন্যতম অবকাঠামো না থাকার পরও রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে সরকারি চুক্তি হলো। কোটি কোটি টাকার বরাদ্দও মিললো। এর পেছনে কে বা কোন শক্তি সেটা কি কখনো সামনে আসবে?
প্রধানমন্ত্রীর এত কাছে যারা তাকে পৌঁছে দিলো, যারা তাকে আওয়ামী লীগের নেতা বানালো এবং বিভিন্নভাবে প্রমোট করলো তাদের দায় কি কোন অংশে কম?
আমি বিশ্বাস করি দল বাঁচাতে, দেশ বাঁচাতে দু:সময়ের কর্মীদের এক হওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যখাতের মিঠু শাহেদরা হাজার কোটি টাকার মালিক। শুধু স্বাস্থ্যখাত না প্রতিটা সেক্টরে মিঠুদেরই দৌরাত্ম। ছাত্রলীগের কোন সাবেক কাজ পায় না, তাদেরকে কাজ দেওয়া হয় না। আপনারা দশজন একত্র হোন। কোথাও গিয়ে দাঁড়ান তো একসাথে। কে আপনাদেরকে কাজ না দিয়ে পারে। কিন্তু আফসোস কি জানেন, আপনারা কখনোই এক হতে পারবেন না।
লোকমান জামিন পায়, সম্রাট জেলে পচে মরে। লোকমান খালেদা জিয়ার পেছনে ছাতা ধরতো আর ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট জান দিয়ে আওয়ামী লীগটা করতো। লোকমানদের সব পাপ মাফ। কিন্তু পেসমেকার বসানো ক্রিটিক্যাল পেশেন্ট সম্রাটের কোন মাফ নেই। এখানে কোন মানবিকতা কাজ করে না!
সুবিধাবাদীদের ভিড়ে ত্যাগীরা গুমরে কাঁদে। তাদের চাওয়া পাওয়ার কোন হিসেব নেই। একটাই প্রাণের আকুতি, দিনশেষে দলটা ভালো থাকুক। তাদের প্রিয় আপা নিরাপদে থাকুন। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে এই আমি লীগের ভিড়ে বড্ড অচেনা লাগে!
লেখক: সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট।