আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ১:২২

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার পর চার টুকরা, পুলিশ কনস্টেবল গ্রেপ্তার

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমকে (৩৫) হত্যার পর লাশ ৪ টুকরা করে বস্তায় ও গর্ভের সন্তানকে পলিথিনে ভরে গুম করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে তাফালবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের এক কনস্টেবল।

গত বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার তাফালবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘাতক পুলিশ কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘাতক কনস্টেবলের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনী উপজেলার বড়ধাল গ্রামে। এ ঘটনায় নিহতের মা জুলেখা বেগম বাদী হয়ে গতকাল সকালে শরণখোলা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত পুলিশ কনস্টেবলকে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে বাগেরহাট কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বাগেরহাট পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় জানান, শরণখোলা উপজেলার তাফালবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জ্যোৎস্না বেগম নামে বাচ্চাসহ স্বামী পরিত্যক্তা মহিলাকে দ্বিতীয় বিয়ে করে শরণখোলায় নিয়ে আসেন। জ্যোৎস্নার প্রথম পক্ষে জিসান নামের ১০ বছরের একটি ছেলে রয়েছে।

দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে সাদ্দাম বাগেরহাটের তাফালবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। বৃহস্পতিবার রাতে জ্যোৎস্নার আগের ঘরের বাচ্চা নিয়ে কলহের জের ধরে তাকে হত্যা করে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম স্বীকার করেছে।

নিহত জ্যোৎস্না খুলনার রূপসা উপজেলার চাঁনপুর (নারকেলি) গ্রামের মৃত আবু বকর শেখের মেয়ে। কনস্টেবল সাদ্দামের প্রথম স্ত্রী সাতক্ষীরায় সাদ্দামের বাবা-মায়ের কাছে থাকে বলে জানান এসপি। শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান জানান, জ্যোৎস্না বেগমের কাছেই থাকতো তার প্রথম পক্ষের ছেলে জিসান ( ১০)।

তাফালবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন ভাড়া বাসায় শিশু জিসান প্রতিবেশী একটি শিশুর সঙ্গে বুধবার বিকালে হাতাহাতি করে। ওই শিশুটি পুলিশ কনস্টেবল সাদ্দামকে বিষয়টি জানালে সে জিসানকে কান ধরে উঠবস করায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী জ্যোৎস্না স্বামীকে গালাগাল করতে থাকে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ চরমে উঠলে বৃহস্পতিবার ভোরে স্ত্রী জ্যোৎস্নাকে ভাড়া বাসায় প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সাদ্দাম।

পরে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে। কাটা হয় ২ হাতের কবজি। পেট কেটে গর্ভের ৬ মাসের ভ্রুণ বের করে পলিথিনে প্যাকেট করা হয়। এরপর স্ত্রীর ৪ টুকরা লাশ এবং ভ্রুণ বস্তাবন্দি করে রেখে দেয়া হয় ঘরে। লাশ গুম করার জন্য পাশের বলেশ্বর নদী বা মাটিতে পুতে ফেলার অপেক্ষায় ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল সাদ্দাম। কিন্তু সেই সুযোগের আগেই ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়।

কাজের বুয়া বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ওই বাসায় গিয়ে দেখতে পান পুলিশ কনস্টেবল সাদ্দাম একটি বস্তায় টুকরা-টুকরা লাশ ভরছে। এ সময়ে সাদ্দাম তাকে অর্থের প্রলোভন দিয়ে কাউকে বিষয়টি জানাতে নিষেধ করে। কাজের বুয়া ওই বাসা থেকে বের হয়ে বিষয়টি স্থানীয় লোকজনদের জানায়। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি শরণখোলা থানা পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে শরণখোলা থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে কনস্টেবলের বাসা থেকে ভ্রুণসহ বস্তাবন্দি জ্যোৎস্নার চার টুকরা লাশ উদ্ধার করে। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় ঘাতক সাদ্দাম হোসেনকে (৩০)। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম হত্যাকাণ্ডের এসব তথ্য জানিয়েছে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর আরো বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে বলেও জানান ওসি।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত