আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ১১:০৫

ইউপি চেয়ারম্যানের মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল

ঠাকুরগাঁওয়ের এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ কক্ষে সহযোগীদের নিয়ে নিয়মিত জুয়া খেলা ও মাদক সেবনসহ প্রকল্প বাস্তবায়নেও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছ। জুয়া খেলা আর ইয়াবা সেবনের ভিডিও ভাইরাল হয়ে এখন মোবাইলে মোবাইলে। প্রশাসন বলছে, অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে প্রশাসন জনপ্রতিনিধিসহ দায়িত্বশীলদের ভূমিকা পালন করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু উল্টো চিত্র ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুস ছালামের। তিনি তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বললেও সহযোগীদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত জুয়া খেলা ও ইয়াবা সেবনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

তার এমন অপকর্মের ভিডিও এখন জেলার অধিকাংশ মানুষের মোবাইলে ভেসে বেড়াচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যায় চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম তার সহযোগীদের নিয়ে জুয়ার আসর বসিয়ে অন্য সহযোগীর সহায়তায় আগুন দিয়ে মাদকদ্রব্য সেবন করছেন। তার মাদক সেবনের ভিডিও জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের মানুষের মোবাইলে মোবাইলে। তার অপকর্মের ভিডিও দেখে সমালোচনার ঝড় বইছে।

এছাড়া নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারের এলজিএসপি প্রকল্পের পাঁচ লাখ বিশ হাজার টাকায় ওই ইউনিয়নের কালমেষ বাজারের গ্রোয়ার্স মার্কেটে মর্ডাণ বহুমুখী সমিতির নামে জীম সেন্টারের উপকরণ ক্রয়ে গত ৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন জনপ্রতিধিরা। আর সমিতির উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন চেয়ারম্যান নিজেই।

কৌশল খাটিয়ে জীম সেন্টারের উপকরণ নিজের ভোগ দখলে রাখার অপচেষ্টা ও সরকারের কর্মসৃজন প্রকল্প বাস্তবায়নেও অনিয়মের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। রয়েছে শ্রম না দিয়ে স্বজনপ্রীতি ও সহযোগীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও। নানা অনিয়ম আর পরিষদে সময়মত না আসায় দিনের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকছে চেয়ারম্যানের কক্ষ। দিনে ইউনিয়ন পরিষদে আসেন না।

সন্ধ্যার পর থেকে তিনি পরিষদে বসেন, আর ভোর পর্যন্ত থাকেন। মাঝে মাঝে দিনের বেলা চেয়ারম্যানের দেখা মিললেও চেয়ারম্যানের দুর্ব্যবহারে যেন অতিষ্ঠ সেবা প্রত্যাশীরা। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে চেয়ারম্যানসহ জড়িতদের বিচার দাবি করেন তারা।

রবিবার বেলা সাড়ে ১২টায় গেলে দেখা যায় চেয়ারম্যান আসেননি। চেয়ারম্যান কেন আসনেনি এমন প্রশ্নে দুওসুও ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী রবি চন্দ্র বর্মন বলেন, আবহাওয়ার কারণে হয়তো। এর বেশি কথা বলতে চান নি তিনি।

দুওসুও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম বলেন, আমার প্রতিপক্ষ চক্রান্ত করছে। মাদকের ভিডিওর সত্যতা থাকলে সাথে সাথে পদ থেকে সরে আসার চ্যালেঞ্জ ছুড়েন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চেয়ারম্যান ও কালমেঘ বাজার কমিটির সভাপতি জুয়েল বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ছালামকে বলা হয়েছিল গ্রোয়ার্স মার্কেটে জীম সেন্টার করা যাবে না। কারণ তা অনিয়মের মধ্যে পড়বে। কিন্তু নিষেধ করলেও তা কর্ণপাত করেননি তিনি ।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. যোবায়ের হোসেন জানান, এলজিএসপি প্রকল্পে জীম সেন্টার স্থাপনে অনিয়ম হয়েছে। আমাদের ভুল বুঝানো হয়েছিল।

মাদকের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নুর কুতুবুল আলম জানান, ভিডিওটি দেখেছি। অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

সত্যতা পেলে অন্যান্য মাদকসেবীদের মত মাদক সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রচলিত আইনে বরখাস্তসহ সবরকম ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।

আব্দুস ছালাম ২০১৬ সালের মে মাসে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালে। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে বালিয়াডাঙ্গী থানায় ও পঞ্চগড় জেলার বোদা থানায় ভারতীয় শাড়ি ও ফেনসিডিল চোরাচালানের পৃথক দুটি মামলা হয়।

আরো সংবাদ