আজ - রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - দুপুর ১২:২৫

নতুন ৭ বর্গ কিঃমিঃ জায়গা যশোর পৌরসভার আওতাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ৷

স্টাফ রিপোর্টার।। অবশেষে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। যশোর পৌরসভায় যুক্ত হচ্ছে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন ইউনিয়নের সাত বর্গ কিলোমিটার এলাকা। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন ইতিমধ্যে গেজেট প্রকাশ করেছেন।
১৭৮১ সালে প্রাচীন বৃটিশ-ভারতের জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় যশোর। ১৮৬৪ সালে গঠিত হয় যশোর পৌরসভা। বয়সের সে হিসেবে অনেক প্রাচীন হলেও আয়তনের দিক থেকে অনেকটাই ছোট যশোর পৌরসভা এলাকা। দেড়শ বছরেরও বেশি পুরাতন এই পৌর এলাকার আয়তন মাত্র সাড়ে ১৪ বর্গ কিলোমিটারের একটু বেশি। অথচ, এটির সীমানা বৃদ্ধিতে কখনো কোনো জনপ্রতিনিধি উদ্যোগী হননি। গতবছর এর সীমানা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেন বর্তমান মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। সে সময় তিনি বলেছিলেন, প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ পৌর এলাকা এবং এর যাবতীয় সুবিধা ভোগ করেন। অথচ এটির সীমানা বৃদ্ধিতে এখনো পর্যন্ত কেউ কোনো উদ্যোগ নেননি। যশোর শিক্ষাবোর্ড দেশের প্রাচীনতম একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। অথচ এ প্রতিষ্ঠানটি পৌর এলাকার বাইরে। পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের সম্পূর্ণ অকৃষি জমি নিয়ে এই ঐতিহ্যবাহী পৌরসভার এলাকা বৃদ্ধি সম্ভব। যার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সে উদ্যোগের অংশ হিসেবেই এবার বাড়ছে এই পৌরসভার সীমানা। যা বাস্তবায়ন হলে যশোর পৌরসভার মাস্টার প্লান করে যে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে, তা আরও গতিশীল হবে। শহর সংলগ্ন ৬টি ইউনিয়নের ৭ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌর এলাকায় যুক্ত হতে চলেছে। ইতোমধ্যে যার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ অনুযায়ী যশোর পৌরসভার এই সীমানা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় যার গেজেট প্রকাশ করে গত বছরের ২৪ আগস্ট। আর আপত্তির আবেদনের সময় শেষ হলে গত ১৫ জুলাই চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। সে গেজেটে উপশহর ইউনিয়ন, নওয়াপাড়া ইউনিয়নের নওয়াপাড়া, বিরামপুর, শেখহাটি, কিসমত নওয়াপাড়া, নওদাগ্রাম মৌজা, আরবপুর ইউনিয়নের খোলাডাঙ্গা মৌজা, ফতেপুরের ঝুমঝুমপুর, বালিয়াডাঙ্গা মৌজা, রামনগরের রামনগর, মুড়লী, মোবারককাটি এবং চাঁচড়া ইউনিয়ন এতে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ গেজেট প্রকাশের আগে নির্ভরযোগ্যসূত্র জানিয়েছিল, সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বেশ কিছু অংশ পৌরসভার সাথে যুক্ত হচ্ছে। নির্ধারিত কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর এসব জায়গা পৌর এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যে যেসব ইউনিয়নের অংশ বিশেষ পৌরসভায় অন্তর্ভূক্ত হবে সেসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। উপশহরের বিরামপুর, নওয়াপাড়ার শেখহাটি, কিসমত নওয়াপাড়া ও নওদাগ্রাম, আরবপুরের খোলাডাঙ্গা, ফতেপুরের ঝুমঝুমপুর ও বালিয়াডাঙ্গা, রামনগর ইউনিয়নের রামনগর, মুড়লী ও মোবারককাঠি এবং চাঁচড়া ইউনিয়নের চাঁচড়া।
যশোর পৌরসভার সীমানা সম্প্রসারণ সংক্রান্ত প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়েছিল, কোন ইউনিয়ন পরিষদের যদি এই সীমানা সম্প্রসারণ নিয়ে কোন আপত্তি থাকে গেজেটটি প্রকাশের তারিখ হতে অনূর্ধ্ব ৩০ দিনের মধ্যে আপত্তি জানাতে হবে। আপত্তিটির বিষয়টি নিয়মানুযায়ী ৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে। সে গেজেট প্রকাশের পর দীর্ঘদিনেও কোন আপত্তি না উঠায় সর্বশেষ চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
যশোর পৌরসভা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, আয়তনে তুলনামূলক ছোট হওয়ায় উন্নয়ন কাজে অনেক দাতা সংস্থা এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয় না। মূলত পৌরসভার আয়তনের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ আসে। বর্তমানে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে এই পৌরসভার শত কোটি টাকার উপরে উন্নয়ন কাজ চলছে। পৌরসভার আয়তন বাড়লে এই বরাদ্দ আরো বেশি হতো বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। সূত্র মতে, পৌরসভার আয়তন বৃদ্ধির এই বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে উন্নয়ন কাজে আরো নতুন নতুন বরাদ্দ আসবে। সেই সাথে সিটি কর্পোরেশন ঘোষণারও সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, উপশহর, নওয়াপাড়া, আরবপুর, ফতেপুর, রামনগর ও চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের অর্ন্তভূক্ত মোট ৩ হাজার ৪৬৩টি দাগ পৌর এলাকার সাথে যুক্ত হচ্ছে। যার মধ্যে থাকছে উপশহর ইউনিয়নের বিরামপুর মৌজার ১১৩ দাগ, শেখহাটি মৌজার ১৮৫ দাগ ও কিসমত নওয়াপাড়ার ৬৯৭ দাগ। এদিকে নওয়াপাড়া ইউনিয়নের নওদাগ্রামের ১ থেকে ৩৫০ দাগ। আরবপুর ইউনিয়নের খোলাডাঙ্গার ২৩৫ দাগ, ফতেপুর ইউনিয়নের ঝুমঝুমপুর মৌজার ৩১০ দাগ, বালিয়াডাঙ্গা মৌজার ৪৪০ দাগ, রামনগর ইউনিয়নের রামনগর মৌজার ৪৭৮ দাগ, মুড়লী মৌজার ১৬২ দাগ, মোবারককাঠি মৌজার ৩৫৫ দাগ ও চাঁচড়া ইউনিয়নের চাঁচড়া মৌজার ৪১৩ দাগ।

আরো সংবাদ