আজ - শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, (বসন্তকাল), সময় - দুপুর ২:৩৪

অভয়নগরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চরম বিপাকে, সাধারণ মানুষ

 

যশোরের অভয়নগরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চরম বিপাকে আছেন সাধারণ মানুষ। ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সীমিত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠার উপক্রম হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদরের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে দিশেহারা উপজেলার সাধারণ মানুষ। আয় বাড়ছে না, বাড়ছে ব্যয়। এমন অবস্থায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির পর থেকে উপজেলায় নিত্যপণ্যের বাজারগুলোতে আরও বেশি অস্থিরতা বিরাজ করছে।
এসব স্বল্প আয়ের মানুষের সাথে কথা হলে তাঁরা জানান, দৈনিক যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে নিত্যপণ্য কী রেখে কী কিনবেন। আয়ের থেকে খরচের হিসেব যখন বেশি হয় বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়ে বলে অনেকে জানান। বর্তমানে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিপাকে ফেলছে নিন্ম আয়ের মানুষদের।
কথা হয় উপজেলার আমডাঙ্গা গ্রামের মিল শ্রমিক আকলিমা বেগমের সাথে তিনি বলেন, ২২০ টাকা হাজিরা পাই সব জিনিসের দাম এত বেশি সংসার চালাতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। আমার শরীরটাও ভালো না। পেটে কিছু দিবো না ঔষধ কিনবো, নাকি ছেলে মেয়ের পড়ালেখা করাবো ? একই এলাকার মিল শ্রমিক ফিরোজা আক্তার জানান, ‘জিনিসের দাম বাড়াতে সংসার চালাতে গিয়ে দেনা হয়ে যাচ্ছি। ৬০ টাকা কেজি চাল কিনে বাজার করতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়। তাই আমার দুই বেলা ডিউটি করতে হয়।’
উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের মহাকাল গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক আব্দুস মোতালেব (৪২) জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে আছেন খেটে খাওয়া নির্মাণ শ্রমিকরা । তারা প্রতিদিন যে ৩০০-৪০০ টাকা মজুরি পায় তা দিয়ে কোনটা রেখে কোনটা কিনবে ? তাও সপ্তাহে প্রতিদিন কাজ পাওয়া যায় না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যে চাল কিনতাম ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় তা বর্তমানে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ১৩০ টাকার তেল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আবার চাল,চিন, তেলের দামের সাথে সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে নির্মাণ শ্রমিকদের দিন কাটাতে হচ্ছে খুব কষ্টে। এছাড়া নওয়াপাড়া টু পায়রা রুটে ব্যাটারি চালিত ইজি বাইকে অযাচিত ভাড়া আদায় করছে।
উপজেলার শ্রীধরপুর ইউনিয়নের দিয়াপাড়া গ্রামের ভ্যান চালক আসাদুল গাজী বলেন, বর্তমানে দুইবেলা ভ্যান চালিয়েও ৪০০ টাকা আয় করতে পারি না। চাল, তেল সহ প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেশি। সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়।
এ ব্যাপারে অভয়নগরের সুধীজনরা জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে আছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। তাই সমাজের বিত্তবানদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং করতে হবে। এবিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে স্বল্পআয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠার উপক্রম হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন-চাল,তেল,ডিম,মাছ সহ সব ধরনের মাংসের দাম বৃদ্ধির কারণে নিন্ম আয়ের মানুষদের অনেক বিশেষ ধরনের খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হচ্ছে । গরু ও খাসির মাংসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বর্তমানে মুরগীর দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই পূর্বে সপ্তাহে একদিন মাংস খেতে পারলেও এখন মাসে একদিন খাওয়াই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষদের। সব ধরনের মাংস ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে তাদের। তিনি আরও জানান, কিছু অসাধু ও সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ী বাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিছু কিছু জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাজার মনিটরিং করতে হবে। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর অভয়নগর উপজেলা শাখার সভাপতি ও অবঃ সহকারী অধ্যাপক হাফিজুর রহমান বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষেরা অনেক কষ্টে আছে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু নিন্ম আয়ের মানুষের আয় বাড়ছে না। তাদের পাশাপাশি কিছুটা স্বচ্ছল পরিবারও বর্তমানে কষ্টে দিন পার করছে। জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির পর থেকে নিত্যপণ্যের বাজারগুলোতে আরও বেশি অস্থিরতা বিরাজ করছে। আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বাড়বে শুনলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অথচ যখন দাম কমে তখন আর কমে না। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সময় অশ্বের গতিতে বাড়ে কিন্তু কমার সময় কচ্ছপের গতি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারকে টিসিবি’র মাধ্যমে পণ্য বিতরণ আরও বাড়াতে হবে। এবং বিত্তবানদের উচিত সম্পদের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করতে হবে এই মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে এসে নিন্ম আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
অভয়নগর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক শিক্ষক সুনিল দাস এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিছু পণ্যের দাম অসহনীয় ভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়াও এ অঞ্চলে বর্তমানে ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক, নসিমন, করিমন সহ কিছু যানবাহনে অযাচিতভাবে বেশি ভাড়া আদায় করছে। এতে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, এমন ক্রান্তিলগ্নে জনপ্রতিনিধিদের উচিত বিত্তবানদের সঙ্গে নিয়ে নিন্ম আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা। এবং বাজার মনিটরিং জোরদার করা।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত