আজ - শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - বিকাল ৪:৫৮

আজ বাংলা সনেটের সার্থক স্রষ্টা মধুসূদন দত্তের ১৯৭তম জন্মবার্ষিকী।

আজ সোমবার (২৫ জানুয়রি) বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৭তম জন্মবার্ষিকী। ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার তথা বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। 

মহাকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ (সোমবার) বিকেলে যশোর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাগরদাঁড়ির মধুমঞ্চে কবির জীবনীর উপর আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান শুরুর আগে মধুকবির আবক্ষে পু®পার্ঘ অপর্ণ করা হবে। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এবার কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে মধুমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামের বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মধুসূদন দত্ত। তার বাবা জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত আর মা জাহ্নবী দেবী। মধুসূদন দত্ত ছোটবেলায় কলকাতা যান। খিদিরপুর স্কুলে দুই বছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। বাংলা, ফরাসী ও সংস্কৃত ভাষায়ও শিক্ষা লাভ করেন।

১৮৪৪ সাল থেকে ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতার বিশব কলেজে অধ্যায়ন করেন। সেখানে তিনি গ্রিক, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখেন। তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভুক্ত হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত পত্রিকা মাদ্রাজ স্পেক্টেটর এর সহকারি সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৬২ সালের ৯ জুন ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য তিনি বিলেত যান। ১৮৬৬ সালে তিনি ব্যারিস্টারি পাশ করেন।
 
মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক ছিলেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি ইংরেজি সাহিত্যেও অসামান্য অবদান রাখায় বিশ্ববাসী এই ধীমান কবিকে মনে রেখেছে কৃতজ্ঞচিত্তে।

যদিও তাঁর প্রথম ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ‘ঞযব ঈধঢ়ঃরাব খধফরব’ কে ইংরেজরা তখন সাদরে গ্রহণ করেনি। পাশ্চত্যের প্রতি আর্কষিত মধুসূদন ১৮৪৩ সালে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়ে ‘মাইকেল’ উপাধি ধারণ করেন। তিনি ইংরেজদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এটি রচনা করলে গ্রন্থটি তৎকালীন ইংরেজ সাহিত্যিকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। মধুসূদন থাকলে তাদের সাহিত্যকর্ম স্থান পাবে না এই সংশয় ইংরেজ সাহিত্যিকদের মাঝে প্রকটভাবে দানা বাধতে থাকে।

ইংরেজি সাহিত্যে তার কীর্তির যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় তিনি মনক্ষুন্ন হয়ে পড়েন। তখনই বুঝতে পারেন শেকড় ভোলার জ্বালা। ইংরেজি সাহিত্য থেকে ছিটকে পড়ে বন্ধু মহলের পরামর্শে মধুসূদন বাংলাভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।

তিনি বাংলা সাহিত্যে উপহার দেন শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য, কৃষ্ণকুমারী, মেঘনাদবধ কাব্য, ব্রজঙ্গনা কাব্য, বীরঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশদপদী কবিতাবলী, হেক্টরবধ এর মতো বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম।

মধুসূদন দত্ত নাট্যকার হিসেবেই প্রথম বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে পদার্পণ করেন। ১৮৫৯ সালে তিনি রচনা করেন ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটক। এটিই প্রকৃত অর্থে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক নাটক।

১৮৬০ সালে রচনা করেন দুটি প্রহসন ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ এবং ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ এবং পূর্ণাঙ্গ পদ্মাবতী নাটক।

পদ্মাবতী নাটকেই তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। একের পর এক রচনা করেন ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ (১৮৬১) নামে মহাকাব্য, ‘ব্রজাঙ্গনা’ কাব্য (১৮৬১), ‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটক (১৮৬১), ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্য (১৮৬২), চতুর্দশপদী কবিতা (১৮৬৬)।

মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আইন ব্যবসায় তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেননি। তা ছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন।

১৮৭৩ সালের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে কপর্দকহীন অবস্থায় মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত মৃত্যুবরণ করেন।

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, সামাজিক দূরত্ব মেনে সীমিত পরিসরে আজ মধুকবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। যথাযোগ্য মর্যাদায় জন্মবার্ষিকী উদযাপন করার লক্ষে সকল প্রস্তুতি স¤পন্ন হয়েছে। করোনার কারণে এ বছর মধুমেলা হবে না।

আরো সংবাদ