আজ - বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - সকাল ১১:২৭

কেশবপুরের হাসান আলীকে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের দাবি

কেশবপুরের যুবক পাবনার আতাইকুলা থানার পুলিশের উপপরিদর্শক হাসান আলীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এমনটিই অভিযোগ পরিবারের। তবে পুলিশের দাবি পারিবারিক কলহের জেরে নিজের ব্যবহৃত পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী। ঘটনার পর থেকে দেশব্যাপী আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে এ বিষয়টি। 

রোববার রাত ৩টার দিকে হাসান আলীর কর্মস্থল পাবনার আতাইকুলা থেকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এ সময় মরদেহকে ঘিরে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতরণ ঘটে। ওই রাতেই শত শত মানুষ তাকে এক নজর দেখতে তার বাড়ি সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গায় ভিড় করেন। পরিবারের সদস্যরাসহ আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশী ও শুভাকাক্সক্ষীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

সোমবার সকাল ৮টায় বসত বাড়ির পাশেই হাসান আলীর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজা নামাজে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জসীম উদ্দীন, কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলা, ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান কামাল, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আফছার উদ্দিন গাজীসহ পাবনার পুলিশ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শরিক হন। এর আগে রোববার রাতে এশার নামাজ বাদ পাবনা পুলিশ লাইন্স মাঠে তার প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে ওই রাতেই পরিবারের লোকজনের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে অ্যাম্বুলেন্সে কেশবপুরের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। সাথে আসেন পাবনা পুলিশ লাইনের উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমসহ পুলিশের একটি দল।

এদিকে সোমবার বিকেলেও নিহত হাসান আলীর বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের আহাজারি দেখা যায়। পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসীরও দাবি, হাসান আলীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করা হলে তার মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব।

নিহত হাসান আলীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তার বাবা জব্বার আলী কান্নারত অবস্থায় বলেন, ‘একটা মাত্র ছেলেকে হারিয়ে আমার আর কিচ্ছু নেই। ভ্যান চালিয়ে ওকে মানুষ করেছি। ওইখানকার ওসির সাথে ছুটি নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় ছেলেকে হারাতে হলো।’

নিহতের বোন মাহফুজা খাতুন মুক্তা বলেন, ‘ভাইয়া আমার খুব আদরের ছিল। তাকে এভাবে হারাতে হবে আমরা কখনও ভাবেনি। ভাইয়াকে কেউ হত্যা করেছে।’

হাসান আলীর মা আলেয়া বেগম বিলাপ করতে করতে জানান, আমার সোনা (হাসান) শুক্রবারে বিসিএস পরীক্ষা দিতে আসতে চেয়েছিল। ওসি আমার সোনারে আসতে দিলো না। আমার সোনারে ওরা মেরে ফেলেছে। ও নিজে নিজে কিছু করিনি।’

নিহতের চাচা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘অভাব অনাটনের সংসারে তাকে আমরা লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছি। ও অনেক মেধাবী ছিল। তার এভাবে চলে যাওয়া আমরা মেনে নিতে পারছি না। এর সুষ্ঠু তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’

কেশবপুর সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আফছার উদ্দিন গাজী বলেন, ‘৩ দিন আগে আমার সাথে কথা হয়েছে। সে বলেছে, ভাইয়া আমি বিসিএস পরীক্ষা দিব- আমার জন্য দোয়া করবেন। আমরা গ্রামবাসী ধারণা করছি, এই পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়ে ছুটি চাওয়াকে কেন্দ্র করে ওখানে কোন একটা ঘটনা ঘটেছে। সে আত্মহত্যা করার মতো ছেলে না। আমরা এর সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই।’

জানা গেছে, হাসান আলী ৩৭তম আউটসাইট ক্যাডেট হিসেবে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পাবনার আতাইকুলায় থানায় উপ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাবা জব্বার আলী একজন ভ্যান চালক। তারা ২ ভাই বোন। ছোট বোন মাহফুজা খাতুন মুক্তার বিয়ে হয়েছে পাইকগাছার কয়রা উপজেলায়।

এ ব্যাপারে পাবনার আতাইকুলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে জানান, ‘হাসান আলীর বিসিএস পরীক্ষা সংক্রান্ত কোন কথা তাকে জানায়নি। তাছাড়া হাসান আলী এসপি স্যারের নিকট ছুটির আবেদন করেন। তার ছুটি পাশ হয়ে থাকলেও সে ছুটিতে যায়নি। ছুটির বিষয়ে তার মা অভিযোগ করে যেটি বলেছেন সেটি সত্য নয়।’

আরো সংবাদ