আজ - শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, (বসন্তকাল), সময় - রাত ২:০৭

কেশবপুরে তীব্র শীতে অসময়ে পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তি চরমে

শীতকালেও কেশবপুর উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠে এসেছে। এ পানি বৃষ্টি বা বন্যার নয়। মাছের ঘেরের পানি সেচ দিয়ে খালে ফেলার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাড়িঘরে পানি উঠে আসায় তীব্র শীতে অসময়ে গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। প্রচন্ড শীতের মধ্যে পানির ভেতর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের। আর এ কারণে পানিবাহিতসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকার মানুষ।

সরেজমিনে উপজেলার পাঁজিয়া ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের বাড়ির উঠানে পানি থই থই করছে। অনেকেই যাতায়াতের জন্য উঠানে তৈরি করেছেন বাঁশের সাঁকো। আবার কেউ কেউ দূর থেকে মাটি এনে উঠানসহ যাতায়াতের রাস্তা উঁচু করার চেষ্টা করছেন। গ্রামের মাটঘাট পেরিয়ে বাড়িতে পানি উঠে আসায় গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে রয়েছেন গ্রামবাসী। গ্রামের বিষ্ণুপদ রায়ের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, গৃহবধূ সবিতা রানী ও রেবা রানী পানির ভেতর দিয়ে হেটে হেটে সাংসারিক কাজকর্ম করছেন। তারা বলেন, জল দিয়ে যাতায়াতে পায়ে চুলকানি শুরু হয়েছে।

গৃহবধূ কল্পনা রানী তার শিশু ছেলেকে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার করছেন উঁচু স্থানে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহবধূ মঞ্জু রায় শুকনো কাঠ সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে শিশু ছেলেকে নিয়ে সাঁকো পার হওয়ার সময় বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, শীতের ভেতর তাদের এ ভোগান্তি হলেও কেউ খবর নিতে আসেনি।

বাগডাঙ্গা গ্রামের সড়কের উপর বাঁশ আনার সময় শংকর হালদার বলেন, ১ হাজার টাকা দিয়ে ৩টি বাঁশ কিনেছেন উঠানে সাঁকো দেওয়ার জন্য।

এ সময় পাশের বাড়ি থেকে পানির ভেতর দিয়ে লাঠি ভর দিয়ে হেটে উঁচু রাস্তায় আসার সময় বৃদ্ধা কমলা ডাক দিয়ে বলেন, “ও দাদুরা তোমরা কারা, আমাগের অবস্থা দেহে যাও। জারের মধ্যি জল দিয়ে যাতি মিলা কষ্ট হয়। এ দুখির কুথা কেউ শোনে না। যদি তুমরা পারো জল ডা এট্টু সুরায় দেও।”

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গ্রামের পাশ্ববর্তী মণিরামপুর উপজেলার শ্রীফলা বিল ও বয়ার খোলা বিলের একাধিক ঘেরের পানি সেচ দিয়ে মনোহরনগর-বাগডাঙ্গা খালে ফেলায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে গ্রামের মানুষের বাড়িঘরে ঢুকে পড়ছে। ঘেরের পানি অপসারণে সেচ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য বলা হলেও কেউ গ্রামের মানুষের কথা শুনছেন না। 

গ্রামের ভেতর মানুষের বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য বৈদ্যনাথ সরকার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে শ্রীফলা বিল ও বয়ার খোলা বিলের ঘেরের পানি সেচ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে মাইকে প্রচার করা হলেও সেচ বন্ধ হয়নি। সেচের ফেলা পানি বাগডাঙ্গা-মনোহরনগর খালে ফেললে বৃদ্ধি পেয়ে গত ১৫ দিন ধরে গ্রামের মানুষের বাড়িঘরে ঢুকে পড়ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পাঁজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুকুল বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে মণিরামপুর উপজেলার দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চত্ত্বরে ঘের মালিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভা থেকে ঘেরের পানি সেচ কার্যক্রম বন্ধ রেখে কেশবপুরের ডায়ের খালের স্লুইস গেট থেকে সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ডায়ের খালের স্লুইস গেট থেকে পানি সেচ শুরু হলেই বাগডাঙ্গা গ্রামের মানুষের বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যাবে। 

কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন, শীতে পানিবন্দি হলে ওই এলাকার মানুষের ডেঙ্গ, টাইফয়েড, ডায়রিয়া ও চুলকানি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত