আজ - শনিবার, ১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - দুপুর ১২:০৭

খুলনায় কোয়ারেন্টিনে ধর্ষণের শিকার ! দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে বাড়ি ফিরলেন সেই তরুণী

খুলনা সংবাদদাতা : খুলনায় কোয়ারেন্টিনে ধর্ষণের শিকার হওয়া সেই তরুণী বাড়ি ফিরেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় ওই নারীকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হওয়ায় পরিবারের পক্ষে তার বোন তাকে বাড়ি নিয়ে যান। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কোয়ারেন্টিনের দুর্বিষহ যন্ত্রণা আর কষ্ট নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরলেন।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) খুলনা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ বসাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বুধবার (১৯ মে) সন্ধ্যায় তার করোনা পরীক্ষার ফল জেলা প্রশাসনের হাতে আসে। পরে রাতেই ওই তরুণীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বুধবার ওই নারীর কোয়ারেন্টিন ১৪ দিন পূর্ণ হয়। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এরপর করোনা পরীক্ষা করতে হয়। ওই দিন বিকেলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পরীক্ষার পর ওই তরুণীকে আবার কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন ওই তরুণী তাকে সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান। আইনগত কারণে তার দাবি পূরণ করা যায়নি। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে ওই কেন্দ্রে থাকা অন্যান্য নারী ও নারী পুলিশ সদস্যরা তাকে নিবৃত করেন।
খুলনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘ওই নারী প্রথম দিন থেকেই কোয়ারেন্টিন থেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলতেন। একপর্যায়ে তাকে ছেড়ে না দিলে ভবন থেকে লাফ দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।’
ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাইদ বলেন, ‘বুধবার দুপুরে ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের ডিএনএ টেস্ট করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে হয়তো অনুমতি মিলবে। আদালতের অনুমতি পাওয়া গেলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হবে।’
খুলনা নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) সোনালী সেন জানান, মেয়েটি ওই ঘটনা ঘটার আগ থেকেই একটু আপসেট ছিলেন। তিনি কোয়ারেন্টিন মানতে চাচ্ছিলেন না। প্রথমদিকে খাওয়া দাওয়াও ঠিকমতো করতেন না। বার বার সন্তানদের কাছে যেতে চাইতেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, অভিযুক্ত এএসআই মোকলেছুর রহমান জেলহাজতে আছেন। তার বিরুদ্ধে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অপরদিকে, কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারতফেরত তরুণীকে (২২) ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। তিন সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের সূত্র জানিয়েছে, ধর্ষণের ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে।
কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যজিস্ট্রেট মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি মঙ্গলবার রাতে। পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের সাথে মিল রয়েছে। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে এবং বিচারাধীন বিষয় সেহেতু এ বিষয় নিয়ে বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাহানাজ পারভীন এবং জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম।’
এদিকে, আত্মহত্যার চেষ্টার বিষয় নিয়ে বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদকের সাথে ফোনে কথা হয় ভিকটিমের। তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যা করতে যাব কেন? গত ১৫-১৬ দিন ধরে এক জায়গায় আটকে রয়েছি। কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করছি যাতে আমাকে ছেড়ে দেয়। তারা সে কথা মানছে না। এ জন্য মন খারাপ থাকায় দরজা বন্ধ করে রেখেছিলাম।’
গত ৪ মে ভারত থেকে ফিরে ওই তরুণী নগরীর পিটিআই ট্রেনিং সেন্টারের দ্বিতীয় তলার মহিলা হোস্টেলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। গত ১৪ মে রাত সাড়ে ১২টার দিকে দায়িত্বরত এএসআই মোখলেছুর রহমান তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেন ওই তরুণী। এরপর তিনি গত ১৭ মে খুলনা সদর থানায় মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন।
এ ঘটনায় উক্ত এএসআই মোখলেছুরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অন্যদিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) পক্ষ থেকে প্রাথমিক তদন্তেও ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত