আজ - রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - দুপুর ২:৩৭

ভুয়া প্রেসক্রিপশন লেখেন জামাই, স্বাক্ষর করেন শ্বশুর

শ্বশুর নূর হোসেন তৃতীয় শ্রেণি পাস, আর তার জামাতা জাহিদুল ইসলাম পড়েছেন দশম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু তাতে কী! তৃতীয় ও দশম শ্রেণি পড়া শ্বশুর-জামাই মিলে রাজধানীর খিলগাঁও তিলপাপাড়া এলাকায় গড়ে তুলেছেন ‘পঞ্চগড় ডেন্টাল কেয়ার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে তারা নিজেদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ রোগীদের দাঁতের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) বিশেষ অভিযানে ধরা পড়েছে তাদের এ অভিনব প্রতারণা। ‘পঞ্চগড় ডেন্টাল কেয়ার’ পরিচালনার আড়ালে অন্য চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করা প্রেসক্রিপশন প্যাডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে রোগী দেখে আসছিলেন তারা।

ভুক্তভোগী রোগীদের করা অভিযোগের ভিত্তিতে আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তিলপাড়ার ওই ডেন্টাল কেয়ারে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব-৩। অভিযান শেষে শ্বশুর নূর হোসেনকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং জামাতা জাহিদুল ইসলামকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন র‍্যাব পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‍্যাব-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।

অভিযান শেষে পলাশ কুমার বসু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অভিযানে দেখা যায় অন্য ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে অপারেশনসহ দাতের ট্রিটমেন্ট দিচ্ছেন নূর হোসেন ও জাহিদুল ইসলাম। জিজ্ঞাসাবাদে ভুয়া চিকিৎসক নূর হোসেন ওষুধের নামও ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারছিলেন না। তখন সন্দেহবশত জানতে চাইলে মো. নূর হোসেন ভ্রাম্যমাণ আদালতকে জানান, তিনি তৃতীয় শ্রেণি পাস। সম্পর্কে তিনি অপর ভুয়া চিকিৎসক জাহিদুল ইসলামের শ্বশুর। জামাতা জাহিদুল আগে পাথর কোম্পানিতে চাকরি করতেন, সেটা ছেড়ে শ্বশুরের সঙ্গে ডেন্টাল ক্লিনিকে ভুয়া চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন।

র‍্যাব-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, ‘জিহান কবির নামের এক চিকিৎসকের প্যাডে তারা স্বাক্ষর করে চিকিৎসাপত্র দিয়ে আসছিলেন। জামাই জাহিদুল ওষুধের নাম লিখতেন আর শ্বশুর নূর হোসেন শুধু স্বাক্ষর করতেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া চিকিৎসা দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন।’

অভিযানকালে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, দালালদের মাধ্যমে তারা জেনেছেন, ওই ডেন্টাল কেয়ারে অভিজ্ঞ চিকিৎসক বসেন। অনেকে চিকিৎসাপত্রও নিয়েছেন। কিন্তু তারা এটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি মাত্র তৃতীয় ও দশম শ্রেণিতে পড়া দুজন ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে এতদিন চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন

ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘নূর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে এ প্রতারণার সাথে জড়িত। তিনি আগে চিকিৎসকদের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। মাঝে মাঝে তিনি চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে চিকিৎসাপত্রও দিতেন। বছর খানেক আগে তিনি নিজেই বেশি লাভের আশায় এই পঞ্চগড় ডেন্টাল কেয়ার নামক প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলে জামাই-শ্বশুর মিলে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন।’

আরো সংবাদ