সরকারি খাসজমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড যা চলছে সারা দেশজুড়ে ৷ এদিকে চাকরি হারালেন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (ভূমি কর্মকর্তা) মো. মাহবুব আনোয়ার। তিনি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় (সাবেক সংযুক্তিতে জামালপুর সদর) কর্মরত ছিলেন।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, মাহবুব আনোয়ার ‘স্ট্রেংদেনিং অ্যাক্সেস টু ল্যান্ড প্রপার্টি রাইটস ফর অল সিটিজেনস অব বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় জরিপ কার্যক্রম চলাকালে জামালপুরের দুবারিয়া মৌজায় শূন্য দশমিক ২৮ একর খাস জমি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় মাহবুবের বিরুদ্ধে জামালপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর অভিযোগ জানিয়ে আবেদন দাখিল করেন উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা।
সরকারি সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড হওয়ায় সরকারের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে ২০১৭ সালের ২৯ জুন সহকারী কমিশনার (ভূমি) জামালপুরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারকে জানান। এর প্রেক্ষিতে জামালপুর সদরের সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।
আদেশে আরও বলা হয়, দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, তার (মাহবুব আনোয়ার) কার্যক্রমে সরকারের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং আগের রেকর্ড হওয়া খাসজমি আপত্তি পক্ষগণকে শুনানি দিয়ে সরকার পক্ষে রেকর্ড দেয়ার পরও তিনি অবৈধ অনিয়মতান্ত্রিক ও বিধি বহির্ভূতভাবে সরকারি খাস খতিয়ানের জমি ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড দিয়েছেন। তিনি আপিল শুনানির সময় শূন্য দশমিক ২৮ একর এক নম্বর খতিয়ানভুক্ত রেকর্ডকৃত জমি ডিজিটাল জরিপের আপত্তি পর্যায় পর্যন্ত সরকারের নামে অন্তর্ভুক্ত থাকার পরও, শুধুমাত্র ৪৮১/১৭ আপিল মামলার মাধ্যমে ব্যক্তির নামে অবৈধভাবে রেকর্ড করিয়ে দেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৪ সালের ১১ মে-র পরিপত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে যে, ‘একতরফা বা দোতরফা ডিক্রি মূলে কোনো সম্পত্তি নামজারি/কালেক্টরেট কর্তৃক উচ্চতম আদালতের মাধ্যমে উল্লেখিত কার্যক্রম চূড়ান্ত না করা পর্যন্ত জরিপ কর্মকর্তাকে সরকারি খাসজমি কারও নামে রেকর্ড করা আবশ্যিকভাবে বন্ধ করতে হবে।’ এরপরও তিনি অবৈধভাবে ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সরকারি খাসজমি বিধিবহির্ভূতভাবে ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড করেছেন। এতে প্রমাণিত হয়, তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে সরকারের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন। তিনি আপিল শুনানিকালে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে সরকারের পক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করা সত্ত্বেও বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে সরকারি খাসজমি অবৈধভাবে ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড দিয়েছেন। এতে সরকারের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়েছে। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে খাসজমি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড করায় সরকারের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, তার এই কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী কেন তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে না বা একই বিধিমালা উপযুক্ত শাস্তি আরোপ করা হবে না- এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়। তিনি (মাহবুব আনোয়ার) এর লিখিত জবাব দেন এবং ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নেন। পরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. তাজুল ইসলাম মিয়াকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে মাহবুব আনোয়ারকে দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।
দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব, তদন্ত প্রতিবেদনসহ সার্বিক পর্যালোচনার পর মাহবুব আনোয়ারকে চাকরি থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়ায় এ বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত চাওয়া হয়। মতামতে সরকারি কর্ম কমিশন তাকে চাকরি থেকে অপসারণের বিষয়ে একমত পোষণ করে।
তাই ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মাহবুবকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।