আজ - শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:৫৭

সুখে নেই যশোরে পোস্ট অফিসে কর্মরত শহিদুলের পরিবার

ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র, মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে, বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিল সুখের সংসার। আজ সেই সংসারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। দুটি সন্তান বুকে নিয়ে দর্জির কাজ করে কোন রকমে দিন পার করছে এক নারী। বলছিলাম যশোরের ঝিকরগাছার আন্দোলপোতা গ্রামের গৃহবধূ আমেনা খাতুনের কথা।

২০০২ সালে আন্দোলপোতা গ্রামের আবু কালামের ছেলে শহিদুল ইসলামের সাথে একই গ্রামের আজিজুর রহমানের মেয়ে আমেনা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর শহিদুল পল্লী বিদ্যুতের চাকরিতে যোগ দেন। পল্লী বিদ্যুতের চাকরির কয়েক বছরের মধ্যে শহিদুল পোষ্ট অফিসের চাকরি পেয়ে যান। সুখের সংসার যেন কানাই কানাই ভর্তি হয়ে ভালোবাসায়। এরই মধ্যে আমেনা ছেলে সন্তানের মা হয়। ছেলেকে মানুষ করতে মা আমেনা খাতুন ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি শহিদুল ব্যস্ত থাকে তার চাকরি নিয়ে। এভাবে কেটে যায় আরো ৫ বছর। আমেনা এবার কন্যা সন্তানের মা হয়। দুটি সন্তানকে নিয়ে তাদের দিনগুলো খুব সুন্দরভাবে কাটছিল। আমেনা ছেলেকে যশোর জিলা স্কুলে ভর্তি করায় আর মেয়েকে মোমিন গার্লসে। এরই মধ্যে শহিদুল পদোন্নতি পেয়ে আইপিও হন। তার বদলি হয় ঈশ্বরদী জেলায়। শহিদুল চলে যায় ঈশ^দীতে পরিবার থাকে যশোরে। আমেনা বুঝতে পারেনি তার পরিবারে নেমে আসছে দুর্যোগের কালো মেঘ। শহিদুল ঈশ^রদী চাকরি করার কিছুদিনের মধ্যে সেখানকার উপজেলা পোষ্ট মাস্টার জেসিকা সুলতানা সেতু নামে এক নারীর প্রেমের ফাঁদে আটকে পড়ে। দু’জনার প্রেম কিছুদিন চলার পরে শহিদুল পুনরায় সেতুকে বিয়ে করেন। বিষয়টি আমেনা খাতুন জানতে পারেনা। এদিকে শহিদুলের বিয়ের কথা ফাঁস হয়ে গেলে শাস্তিমূলক তাকে রংপুরে বদলি করা হয়। বদলির বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গেলে শহিদুলের বিয়ের খবর আমেনা জানতে পারে। একপর্যায়ে পোস্ট অফিসের উর্ধতন কর্তপক্ষের সাহায্যে আমেনা শদিুলকে যশোরের প্রধান ডাকঘরে বদলি করিয়ে নিয়ে আসে। শহিদুল তার মা বাবা সেই সাথে শশুর শাশুড়ি এবং পরিবারের চাপে সেতুকে ডিভোর্স দিতেরাজি হয়। কিন্তু সেটা ছিল শুধুই তাদেরকে দেখানো। পিতামাতার একটাই সন্তান হওয়ায় শহিদুল তার মা বাবাকে ম্যানেজ করে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সাথে দেখা সাক্ষাত বন্ধ করে দেয়। শহরের রায়পাড়ায় তার স্ত্রী সন্তান থাকে। আর সে যশোর প্রধান ডাকঘরের অফিস পরিদর্শক হিসাবে কর্মরত আছেন। অথচ পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া তো দুরের কথা, স্ত্রী তার সাথে দেখা করতে আসলে সে তাড়িয়ে দেয়, এমনকি ছোট দুটি ছেলেমেয়ে বাবার সাথে দেখা করতে আসলেও সে খারাপ ব্যবহার করে। কয়েক মাস শহিদুল তার পরিবারে খরচ হিসাবে কিছু টাকা দিয়েছিল কিন্তু গত ৫ মাস সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে। গতবছরের ২১ অক্টোবর ছিল শহিদুলের ছেলের জন্মদিন। ছেলে জন্মদিনের খরচ হিসাবে বাবার কাছে টাকা চাইতে আসলে সে ছেলের সাথে খারাপ ব্যবহার করে পোষ্ট অফিসথেকে তাড়িয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে আমেনা খাতুন ঝিকরগাছা ইউএনও অফিসে একটিঅভিযোগ করে।

এ বিষয়ে ইউএনও মোঃ আরাফাত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমেনা খাতুনের অভিযোগটি তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

এব্যাপারে জানতে চাইলে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার বলেন, আমেনা খাতুন ও তার স্বামী শহিদুলকে নিয়ে বসা হয়েছিল, তবে কোন সমাধান করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য আমেনা খাতুনকে বলা হয়েছে।

আমেনা জানান, শহিদুল মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সামনে কৌশলে ডিভোর্স পেপারে আমার স্বাক্ষর নিয়ে ৫০হাজার টাকা দিতে চেয়েছিল. আমি রাজি হয়নি। ছেলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আমি ডিভোর্স চাইনা, আমি সংসার করতে চাই। বর্তমানে আমেনা খাতুনের সাথে তার শশুর শাশুড়িও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় আমেনা দর্জির কাজ করে ছেলে মেয়ের পড়ার খরচের পাশাপাশি কোনরকমে দিনাতিপাত করছে, সাথে মা বাবা কিছু সাহায্য সহযোগিতা করেন।

আরো সংবাদ