আজ - শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - সকাল ১১:৪০

স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ময়মনসিংহ-খুলনা বিভাগে

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হন স্ট্রোকে। এতে মৃত্যুহারও সর্বোচ্চ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে দ্বিতীয় প্রধান মৃত্যুর কারণ স্ট্রোক। প্রতি বছর ১ কোটি ৩৭ লাখেরও বেশি মানুষ বিশ্বব্যাপী স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ রোগী মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশেও স্ট্রোক বাড়ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত মেদ, মানসিক চাপ ছাড়াও অতিরিক্ত ডায়াবেটিসের কারণে স্ট্রোক হতে পারে। অথচ এ রোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। মৃত্যুহার বেশি হলেও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বেঁচে থাকা রোগীরা দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক বৈকল্যে ভোগেন। এ অবস্থায় সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

প্রতি বছর হাজারে ১১ দশমিক ৪ জন রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। সে হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরলে বছরে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন ১৮ লাখ ২৪ হাজারের বেশি রোগী। দেশে ৬৪ জেলা থেকে স্ট্রোকের রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণার পর এমন তথ্য জানায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স বিভাগ।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, দেশে সবচেয়ে বেশি স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগে। এ দুটি বিভাগে এ হার সর্বোচ্চ হাজারে ১৪ জন। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী বিভাগে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর হার সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে। ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স বিভাগে এই হার ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।

এমনই এক পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। বিশ্বব্যাপী স্ট্রোক প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব স্ট্রোক সংস্থা প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর এ দিবসটি পালন করে। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘মিনিটস ক্যান সেভ লাইভস’, অর্থাৎ মিনিট বাঁচায় জীবন।

স্ট্রোক রোগকে অনেকে হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। এটি মূলত মস্তিস্কের রোগ। মস্তিস্কের কোনো স্থানের রক্তনালি সরু বা একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে ওই স্থানে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মস্তিস্কের ওই বিশেষ এলাকা কাজ করতে পারে না। এটিই স্ট্রোক। স্ট্রোকে আক্রান্তের দুই-তৃতীয়াংশই মারা যান বা চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। এ রোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। ফলে দেশে দ্রুত স্ট্রোক বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, মস্তিস্কের বিশেষ কিছু অংশ শরীরের যে যে অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে, স্ট্রোক হলে সেসব অংশের বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে। মস্তিস্কের এক দিক আক্রান্ত হলে শরীরের উল্টো দিক বিকল হয়ে পড়ে।

স্ট্রোকের লক্ষণ

হাত-পা হঠাৎ অবশ হয়ে যাওয়ার কারণে তা নাড়াতে না পারা, মুখ বেঁকে যাওয়া, হাসার সময় মুখ অন্য পাশে চলে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া। এ ছাড়া শরীরের এক পাশ অবশ হওয়া, হঠাৎ চোখে না দেখা, খাবার গিলতে সমস্যা, হাঁটতে না পারা, হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হওয়া। এ ছাড়া বমি বমি ভাব বা বমি, ঘুম ঘুম ভাব, চোখে একটি জিনিস দুটি দেখা। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবজ্ঞা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

সম্প্রতি এক সভায় ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষ নানা কারণে স্টোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে উচ্চ রক্তচাপের কারণে বেশিরভাগ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। সমীক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করে ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশে যারা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপের রোগী। স্ট্রোকে আক্রান্তদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ রোগী অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করেন। দেশে স্ট্রোকে আক্রান্ত ১৯ শতাংশ রোগীর দেহে অতিরিক্ত মেদ থাকে। ১৭ শতাংশ রোগী মানসিক চাপের শিকার।

আরো সংবাদ