স্বজনদের অভিযোগ ছিল, তিন আসামির পরিবারের কাছ থেকে ৪৭ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও কথা রাখেননি নারায়ণগঞ্জ সদর থানার এসআই শামীম আল মামুন। তিন আসামিকে নির্যাতন করে একটি মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করিয়েই ছেড়েছেন। এখন ওই মেয়েটি ফিরে আসার পর এসআই শামীম ঘুষের টাকা ফেরত দিতে আসামিদের পরিবারের পিছে ঘুরছেন।
নারায়ণগঞ্জে ১৫ বছরের কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগে ৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় মামলা হয়। মামলার পর পুলিশ দ্রুতই সন্দেহভাজন অটোরিকশাচালক রকিব (১৯), আবদুল্লাহ্ (২২) ও নৌকার মাঝি খলিলকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে দরিদ্র তিনজনের পরিবারের কাছ থেকে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম আল মামুন ৪৭ হাজার টাকা নেন বলে অভিযোগ। তবে টাকা নিয়েও এসআই কথা রাখেননি।
পরিবারগুলোর দাবি, ওই তিনজনকে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে পুলিশ জবানবন্দি দিতে বাধ্য করে। যেই জবানবন্দিতে ওই তিনজন বলেছেন, মেয়েটিকে তাঁরা ধর্ষণের পরে হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন।
গত রোববার সন্ধ্যায় ‘মৃত মেয়েটির’ ফিরে আসার পর গোল বেধেছে। পুলিশের তদন্ত নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এর মধ্যেই ওই এসআই শামীম আল মামুনকে ওই মামলার তদন্তকাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশ ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এসআই শামীম মঙ্গলবার আসামি খলিল মাঝির স্ত্রী শারমিন বেগমকে ডেকে নিয়ে ঘুষের ছয় হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে স্বজনেরা জানান। বুধবার বিকেলে খলিল মাঝির ছোট ভাই আল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এসআই শামীম স্যার ভাবীরে থানার কাছাকাছি ডাইকা নিয়া ঘুষের ৬ হাজার টাকা ফিরায়া দিছে।’
ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়া প্রসঙ্গে অভিযুক্ত এসআই শামীম আল মামুনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে গ্রেপ্তার অপর আসামি আবদুল্লাহর বাবা চা-পানদোকানি আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রকিবের ভাই সজীব আমাকে ফোন দিয়ে বলেন এসআই শামীম স্যার আপনাকে থানায় ডাকতেছে, আপনাদের কাছ থেকে নেওয়া ১০ হাজার টাকা ফেরত দেব। আমি থানায় যাব কেন বলে ফোন কেটে দেই। পরে এসআই শামীম স্যারের সোর্স কিসলু আমারে ফোন দিয়া কয়, “স্যারে আপনার সাথে কথা বলব, থানায় আইসা টাকা নিয়ে যান। কিন্তু আমি আমার উকিলের সঙ্গে কথা না বইলা টাকা নিতে যাব না বলে আর যাই নাই।’
এদিকে বিকেলে ঘুষসহ এসআই শামীম আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) কে এম মোশাররফ হোসেন তাঁর অফিসে (এসপি অফিস) আসামির পরিবারের লোকজনকে ডেকে কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে আবদুল্লাহর বাবা আমজাদ হোসেন জানান, এসপি অফিসে ডেকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন কর্মকর্তারা। তাঁরা এসআই শামীমের ঘুষের টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় বলেছেন।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম প্রথম আলোকে জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আসামিদের স্বজনদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ও ফেরত দেওয়া ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের প্রমাণ পেলে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ ওঠায় অভিযুক্ত এসআই শামীমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে