গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গ্রেফতার করা হয় ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি ও দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে।
এদিকে, অভ্যুত্থানের পর রাস্তায় নেমে আসে দেশটির জনগণ। গড়ে তোলে কঠোর আন্দোলন।অন্যদিকে, আন্দোলন প্রতিহত করতে কঠোর নির্দেশ দেয় সেনাবাহিনী। শহরে শহরে জারি করে কারফিউ। বিশ্বজুড়ে শুরু হয় সমালোচনা।
এরই মধ্যে বিক্ষোভকারীদের দমন করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর আচরণ গণমাধ্যমে আসতে শুরু করেছে। এমন একটি তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন দেশটির এক পুলিশ সদস্য, যিনি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
মিয়ানমার পুলিশের ল্যান্স কর্পোরাল থা পেং জানিয়েছেন, মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গুলি করো- এমন নির্দেশ পেয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। কয়েকবার সেই নির্দেশ অমান্য করার পর তিনি পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন থা পেং। বলেছেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খামপাত শহরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাবমেশিনগান থেকে গুলি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেদিন তিনি নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেন। তার ভাষায়, পরের দিন একজন অফিসার আমাকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, তুমি কি গুলি করতে পারবে? ২৭ বছর বয়সী এই ল্যান্স কর্পোরাল এমন নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর পুলিশ বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন।
১ মার্চ বাড়ি ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে ভারতের উদ্দেশে পা বাড়ান। তিন দিন সফরে করেন, বিশেষ করে রাতে, যাতে কেউ তাকে ধরতে না পারে। এরপর ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন।
মঙ্গলবার তিনি রয়টার্সকে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এছাড়া আমার সামনে কোনও বিকল্প ছিল না। এ সময় তিনি নিজের নামের অংশবিশেষ শুধু জানিয়েছেন নিরাপত্তার জন্য। এ সময় তিনি পুলিশে চাকরি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন করেছেন নিজের নামকে প্রতিষ্ঠিত করতে।
থা পেং বলেছেন, তার সঙ্গে ২৭ ফেব্রুয়ারি আরও ৬ জন সহকর্মী ঊর্ধ্বতন এক অফিসারের নির্দেশ অমান্য করেন। তবে বাকিদের নাম জানাননি তিনি। তবে তার সব দাবি যাচাই বাছাই করা যায়নি।
এর আগে ১ মার্চ মিজোরামে আরেক মিয়ানমারের ল্যান্স কর্পোরাল ও তিন কনস্টেবল একই রকম বক্তব্য দিয়েছিলেন। তারাও পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের বিষয়ে মিজোরাম পুলিশ লিখিত তথ্য সন্নিবেশ করেছে। এতে ওই চার ব্যক্তির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং তারা কেন পালিয়ে ভারতে গিয়েছেন তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এতে মিজোরাম পুলিশকে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় ওই চারজন বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অভ্যুত্থান বিরোধীদের ওপর গুলি করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আমাদের। গণঅসহযোগ আন্দোলন যখন জোরালো হয়ে উঠেছে, সেখানে আমরা নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে, যারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করতেন, তাদের ওপর গুলি করতে পারি না।