জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকসহ ৪ সংগঠনের ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। গত সপ্তাহে সরকারের একটি সংস্থার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। চিঠিতে আজ সোমবারের (১৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যে এই তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
তালিকায় থাকা এই ১১ জন সাংবাদিক নেতা হলেন-জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি (আওয়ামী লীগ সমর্থিত) ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক (বিএনপি সমর্থিত) ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি (বিএনপি সমর্থিত) আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক (আওয়ামী লীগ সমর্থিত) সাজ্জাদ আলম খান তপু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) (বিএনপি সমর্থিত) সভাপতি এম আব্দুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) (আওয়ামী লীগ সমর্থিত) সভাপতি মোল্লা জালাল ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালীন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান।
ব্যাংকগুলোর উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনাদের শাখায় এই ১১ সাংবাদিকের নামে কোনো ধরনের ব্যাংক হিসাব বর্তমানে বা আগে পরিচালিত হয়ে থাকলে সব হিসাবের যাবতীয় তথ্যের সফট কপি (যাবতীয় কাগজপত্রসহ হিসাবগুলোর তালিকা), হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি, প্রোফাইল ফরম, টিপি ও অনুরূপ দলিল ও হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী সোমবারের মধ্যে (১৩ সেপ্টেম্বর) মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সরকার যেকোনো সময়ে যেকোনো কারও ব্যাংকের হিসাব চাইতে পারে। তবে সব নির্বাচিত সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংকের হিসাব চাওয়ার কারণে জনগণের মধ্যে একটা ভুল বার্তা যেতে পারে। তবে এতে আমি খারাপ কিছু মনে করি না, এটা হতেই পারে।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন এ হিসাব চাওয়া হয়েছে জানি না। তবে চাওয়া যেহেতু হয়েছে হিসাবের তথ্য সব জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক। পাশাপাশি এ দেশে অনেক দুর্নীতির কথা শোনা যায় তাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য উপাত্ত চাওয়া হোক।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক বলে মানুষ মনে করে তাঁদের খবর না নিয়ে সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব চাওয়াটা কিছুটা হাস্যকর পর্যায়ের হয়েছে। তার পরও উদ্যোগটিকে স্বাগত জানাই। তবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের ব্যাংক হিসাবে যা পাওয়া যাবে, তা হুবহু জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। না করলে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের অসততা হবে বলে আমি মনে করি।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী বিষয়টিকে স্বাগত জানালেও কিছুটা বিস্মিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার নামটি দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। দেশের সাংবাদিকেরা দুর্নীতিমুক্ত আছে কি না সেটা দেখার এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ছিল আগে থেকে তদন্ত করে যাদের ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন রয়েছে তাদের হিসাব তলব করা। এটা হওয়ার কারণে আত্মীয়স্বজন ও জনগণের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই, সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করব সরকার সমাজের অন্য পেশার মানুষদের জন্যও এটা চালু রাখবে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ করছে বলে অনেকে বলছেন, যেটা আমি বিশ্বাস করতে চাই না।’