আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ৬:৩০

অভিনব কায়দায় পুরো পরিবার নিয়ে নৌকায় করে ভিক্ষা! প্রতিদিন আয় ৩-৪ হাজার টাকা

দুই কন্যা আর দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে নদীর মাঝে নৌকায় করে ভিক্ষা করেন ৪০ বছর বয়সী ফাতেমা খাতুন। সন্তানদের দেখিয়ে এভাবে ভিক্ষা করে তার প্রতিদিন আয় ৩-৪ হাজার টাকা। অনেক সময় ২০০-৩০০ ইউএস ডলার বা বিদেশি মুদ্রাও পান। ফাতিমা খাতুনের ভিক্ষা আদায়ের লক্ষ্য শুধু বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন দেখতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করা।

মোংলা বন্দর পার হয়ে সুন্দরবনের করমজল ফরেস্ট অফিস। খুলনা থেকে বিলাসবহুল নৌযানযোগে সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখতে যাওয়া দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নৌযান পশুর নদীর মাঝে নোঙর করার সময় দূর থেকেই নৌকায় ভিক্ষার জন্য হাত পেতে চিৎকার করতে থাকেন ফাতেমা। নৌযান থেকে ছোট ডিঙ্গি নৌকায় ওঠার সময় ফাতেমা আর তার সন্তানদের আকুতি দেখে পর্যটকরা সাহায্য করেন। সম্প্রতি এ প্রতিনিধি সুন্দরবন ভ্রমণকালে এই চিত্র ধরা পড়ে।

জানতে চাইলে স্বামী আবুল হোসেন মারা গেছেন বলে জানান ফাতেমা। বর্তমানে এভাবে নৌকায় নদীতে ভিক্ষা করে সংসার চালান। ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো হয় কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে জানান, এখন স্কুল বন্ধ। তাই স্কুলে যায় না।

নিজে মোংলা শেলাবুনিয়া ইউনিয়নের কানাই নগরের বাসিন্দা বলে জানান এই নারী ভিক্ষুক। তিনি অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান-মেম্বার তাকে কোনো সাহায্য দেননি। তার কোনো ভাতার কার্ড নেই।

ফাতেমা জানান, স্বামী মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। পরিবার নিয়ে এভাবে নৌকায় করে পর্যটকদের কাছে ভিক্ষা করেন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। নদীতে ভাসমান থাকেন, নৌকার ভেতর রান্নাবান্না করে খাওয়া-দাওয়া করেন।

একের পর এক প্রশ্ন করায় একটু বিরক্ত হন ফাতেমা। তার মেয়ে সাজু পাল্টা প্রশ্ন করে, কী হবে এসব শুনে? পরে তাকে আশ্বস্ত করা হয়, খবর প্রকাশ হলে তার বাড়ি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু ফাতেমার সরকারি সাহায্যের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। কত আয় হয় তাও বলতে চান না।

বিলাসবহুল জাহাজের সঙ্গে থাকা ট্রলার মাঝি করিম জানান, আগের জাহাজে এক বিদেশি ভিক্ষুক ফাতেমাকে ১০০ ডলারসহ দেড় হাজার টাকা দিয়েছেন। এ প্রতিনিধি যে জাহাজে ছিল সে জাহাজে ঢাকা থেকে আগত কয়েকজন যাত্রীকেও ১০০ টাকার কয়েকটি নোট দিতে দেখা যায়।

করমজলে দেশি-বিদেশি পর্যটকবোঝাই বিলাসবহুল নৌযান নোঙর করার সময় থেকে তাদের নৌকায় চিৎকার আর অঙ্গভঙ্গি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাদের এ রকম আচরণ দেখে অনেক পর্যটক মনে করেন, ওই নারী হয়তো কোনো বিপদে পড়েছেন।

শিশুপুত্র আর কন্যাদের নিয়ে কেন এই ভিক্ষাবৃত্তি, এমন প্রশ্ন করলে ফাতিমা একটু রাগান্বিত হয়ে জবাব দেন, ‘মেয়েদের কোথায় রেখে আসব?’ তবে নৌকা কত টাকা দিয়ে কিনেছেন, জানতে চাইলে জবাব দেননি ফাতেমা। শুধু বলেন, ‘স্বামী মারা গেছে, তাই তিনি এই জাহাজে জাহাজে সাহায্য নিয়ে সংসার চালান।’

যখন বিলাসবহুল নৌযান থাকে না, তখন করমজলে ট্রলার নিয়ে আসা পর্যটকদের কাছে নৌকায় করে গিয়ে ভিক্ষা করেন এই নারী। ফাতেমার মেয়ে সাজু জানায়, ট্রলারে বেশি টাকা পাওয়া যায় না, তবে জাহাজ/বিলাসবহুল নৌযানে অনেক বেশি আয় হয়। কয়েক দফায় একজন একাই দুই হাজার টাকা পর্যন্ত দেন।

সুন্দরবন ট্যুর অপারেটর মালিক সমিতির অন্যতম নেতা মাজাহারুল ইসলাম কচি জানান, ফাতেমা নৌকায় করে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে ভিক্ষা করে লাভবান হয়েছেন, তাই অন্য কিছু করতে চান না। পর্যটন মৌসুম শুরু হলেই নিয়মিত তাকে নদীতে দেখা যায়। তিনি বলেন, বিদেশিদের কাছে বিষয়টি দেশের সুনাম নষ্ট করছে। কিন্তু দেখবে কে?

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত