আজ - রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - রাত ৮:৫৪

‘মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের দেখিয়ে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন হেফাজত নেতারা’

ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেছেন, হেফাজতের মধ্যে অনেক নেতা উগ্রবাদী মানসিকতা নিয়ে নাশকতায় জড়িত। সারা দেশে ওয়াজ মাহফিল নিয়ন্ত্রণের জন্য রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন নামক একটি সংগঠন তৈরি করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহবুব আলম বলেন, নিজেদের নেতাকর্মীদের দ্বারা গড়া সিন্ডিকেট সংগঠনটি নিয়ন্ত্রণ করছে। আর সারা দেশে ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে তাদের উগ্রবাদী চিন্তাধারা, বক্তব্য প্রচার ও বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, নাশকতার অভিযোগে ঢাকাসহ সারাদেশে বেশ কিছু মামলা রুজু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ সালে হেফাজতের শাপলা চত্বরে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় মোট ৫৩টি মামলা দায়ের হয়। মোট ৬৪টি মামলা তদন্তাধীন আছে। এ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের ১৪ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। তারা আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছেন।

মাহবুব আলম বলেন, যেহেতু রজমান মাস, সংযমের মাস। তিনটি টিম গঠন করে দিয়েছি। যাদের কোরআন হাদীসের জ্ঞান আছে, তাদের টিমে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি।

আমরা সম্প্রতি ও ২০১৩ সালে দায়ের করা মামলা তদন্ত করছি। এর অধিকাংশগুলোই নাশকতার মামলা। নাশকতার ঘটনাগুলোর উদ্দেশ্য কি, কারা করছে কেন করছে সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি।

মূলত ২০১৩ সালে সরকার পতনের লক্ষ্যে একটি চক্রান্ত হয়। সেই চক্রান্তের মধ্যে জড়িত ছিল রাজনৈতিক দল নেতা। নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল সরকার পতনের। সেখানে হেফাজতকে কাজে লাগিয়ে সরকার পতনের অপচেষ্টা চালিয়েছিল।

মাহবুব আলম আরও বলেন, চলতি বছরও নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে যে নাশকতা হলো সেখানেও একই ধরনের সরকার পতনের কৌশল নেয়া হয়েছিল। সেটা এখন পরিষ্কার। নেতারা হেফাজতকে অরাজনৈতিক বললেও সকল নেতাই কোনো কোনো দলের নেতা।

তাদের প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের আলাদা আলাদা এজেন্ডা আছে। হেফাজতকে অরাজনৈতিক আখ্যা দিয়ে তাদের সেই দলীয় এজেন্ডাগুলো আদায় বা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। হেফাজতে ইসলাম এমন একটি সংগঠন যার ডাকে সকল মাদরাসা ছাত্রকে ডাকা যায়, সাড়া দেয়। এই সুযোগ নিয়েই হেফাজতকে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে।

২০১৩ সালে ১৬৪ ধারায় বাবুনগরী জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সম্প্রতি মুফতি ফখরুলের জবানবন্দিতে সেই ধরনের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে কিছু বিষয় পরিষ্কার হয়েছে, হেফাজতের রাজনৈতিক চরিত্র আর নেই। হেফাজত এখন অনেকের ক্ষমতায় যাবার জন্য অপচেষ্টা করছে, নাশকতা করছে।

হেফাজত নেতারা আসলে কী চান, এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব আলম বলেন, তারা আসলে চান সরকার পতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান মডেল বানানোর পরিকল্পনা আছে।

হেফাজতের অনেক নেতা আছে যারা উগ্রবাদকে সমর্থন করেনা। তবে আমরা তদন্তে উগ্রবাদী নেতাদের নাম জানার চেষ্টা করছি। উগ্রবাদের মাধ্যমে যারা নাশকতার চেষ্টা করছে সেই ধরনের ভিডিও ফুটেজ, অডিও ও জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যগুলো সমন্বয়ের চেষ্টা করছি।

যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, মাদরাসা ছাত্রের এতিম অসহায় ছাত্রদের দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ বাড়ি গাড়ি করেছে হেফাজত নেতারা। মাদরাসা দখলের মতো অপকর্ম ও অনেকের নারী বিলাসের মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

আরো সংবাদ