যশোর পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ভোট গ্রহণে আর কোনো বাধা না থাকলেও নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারি হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাতিল করেন। ফলে, দীর্ঘ ১০ দিনের জল্পনা-কল্পনা আর টেনশন দূর হলো। ভোট হওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নতুন করে নড়েচড়ে বসেছেন। গতকাল বিকেল থেকেই পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রার্থীদের পোস্টার টাঙানোর হিড়িক পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে বদলে যায় দৃশ্যপট। বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মীরা নানাভাবে মহড়া দেয়। অনেকেই প্রচার মিছিল করে। প্রথমবারের মতো মিছিল করেন বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মারুফুল ইসলামের কর্মী সমর্থকরা। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও প্রার্থী মারুফুল ইসলাম। যদিও আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হায়দার গনি খান পলাশ শুরু থেকে প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন। তবে, সন্ধ্যার পর নির্বাচন কমিশন থেকে রিটার্নিং অফিসারের কাছে চিঠি এসেছে নির্বাচন স্থগিত করার জন্য। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত ওই চিঠির স্মারক নম্বর ১৭.০০.০০০০.০৩৪.৩৮.০২২.২০ (অংশ-১) ১৭৫। যশোর পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তিতে ছিলেন ভোটার,প্রার্থীসহ সাধারণ মানুষ। একই অবস্থায় ছিলেন খোদ রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্তি কাটছিল না। একটি পক্ষ বলছিল নির্ধারিত তারিখে নির্বাচন হবে না। আবার আরেক পক্ষ দাবি করে আসছিল যথাসময়ে নির্বাচন হবে। গতকাল শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হওয়ার পক্ষে থাকাদের কথাই ঠিক হয়।আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে গত ২০ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২১ জানুয়ারি থেকে যথারীতি নির্বাচনী কাজ শুরু করে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়। মনোনয়নপত্র বিক্রি, জমা এবং যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়। এই কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন স্থগিত করতে হাইকোর্টে রিট হয়। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নির্বাচন না করতে তিন মাসের জন্য স্থগিত আদেশ দেন। ওই বেঞ্চের সরকারি কৌঁসুলি তখন জানিয়েছিলেন সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা সংশোধনের দাবিতে রিট হয় হাইকোর্টে। ওই রিটের শুনানি শেষে যশোর পৌরসভার নির্বাচন আগামী তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। যশোর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতির আদালতে গত রোববার এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও ওই চেম্বারের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান তা মুলতবি করেন। সর্বশেষ,গতকাল বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ স্থগিত করার আদেশ দেন। একইসাথে আবেদনটির শুনানির জন্য ২২ ফেব্রুয়ারি নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এদিন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। আর রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট পঙ্কজ কুমার কুন্ডু। ফলে, ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করতে আর কোনো বাধা নেই। তবে, আপিল বিভাগের এই আদেশের কপি গতকাল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে আসেনি বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন। গতকাল কমিশনে এসেছে ৯ ফেব্রুয়ারির স্থগিতাদেশের কপি। এ কারণে নির্বাচন কমিশন থেকে যশোরের রিটার্নিং অফিসার হুমায়ুন কবিরের কাছে নির্বাচন স্থগিত আদেশ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। স্থগিত আদেশ বাতিল সংক্রান্ত আদেশ নির্বাচন কমিশনে আসলে তখন নির্বাচন করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ মোরশেদ আলম।এদিকে, স্থগিতাদেশ বাতিল হওয়ার খবর জানাজানি হওয়ায় নতুন করে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে যশোর পৌরসভায়। বিভিন্ন প্রতীকের পোস্টার টাঙানো হচ্ছে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। গতকাল সন্ধ্যার আগে শহরের ওয়াপদা এলাকায় ব্লাকবোর্ড প্রতীকের পোস্টার টাঙাতে দেখা যায়। এছাড়া,অন্যান্য এলাকায়ও নতুন করে পোস্টার ঝুলতে দেখা গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে নির্বাচনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি আসেনি বলে সেখান থেকে জানানো হয়। অগত্যা যোগাযোগ করা হয় নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের দপ্তরে। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট শাখায় কথা বলতে বলা হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মোর্শেদ আলমকে ফোন করা হলে তিনি বলেন,‘কমিশন আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবে। নির্বাচন স্থগিত করার আদেশ পেয়েছি। স্থগিতাদেশ বাতিল হওয়ার আদেশ এখনো পাইনি।’সর্বশেষ, গতকাল রাতে যশোর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত রাখার বিষয়ে চিঠি পেয়েছেন রিটার্নিং অফিসার।